মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট এবং বল হাতে ভালো পারফরম্যান্স দেখালেন রবীন্দ্র জাদেজা। হঠাৎ করেই দেখা গেলো টেস্ট অলরাউন্ডারের তালিকায় সাকিবকে হটিয়ে শীর্ষে চলে আসলেন ভারতের জাদেজা। নিয়মিত টেস্ট খেলার ফলে জাদেজারা বার বার উঠে আসেন র্যাংকিংয়ে।
Advertisement
কিন্তু তাদের সেই উঠে আসা যে খুবই সাময়িক, তা কয়েকদিন পরই বোঝা যায়। কারণ, এক টেস্টে ভালো করে রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে উঠে আসে ওপরের দিকে। পরের টেস্টেই আবার বাজে পারফরম্যান্স তাদের রেটিং পয়েন্ট কমিয়ে দেয়। আবার তারা নেমে যায় নিচের দিকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের টেস্ট সিরিজ চলাকালীনই তার প্রমাণ হয়ে গেছে। এক টেস্টে ভালো করে শীর্ষস্থান থেকে সাকিবকে হটিয়ে দিয়েছিলেন জাদেজা। পরের টেস্টে (পাল্লেকেলে) শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি। তাতেও রেটিং পয়েন্ট কমে গেলো জাদেজার।
আবারও তাকে টপকে শীর্ষে উঠে এলেন সাকিব। অথচ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের আগে সাকিব সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গত মার্চে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। টেস্ট খেলার সুযোগই পাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
Advertisement
টেস্ট না খেলেও অলরাউন্ডারদের তালিকায় কিভাবে সাকিব থাকেন? এটা অনেকের কাছেই প্রশ্ন। সমালোচকরাও সুযোগ পেয়ে এক হাত নিতে ছাড়েন না সাকিবকে। তাদের প্রশ্ন, দিনের পর দিন না খেলে কিভাবে সাকিব শীর্ষে থাকেন? তাদের সন্দেহ, আইসিসির র্যাংকিং সিস্টেমেই হয়তো কোনো গণ্ডগোল আছে।
গণ্ডগোল আছে কী নেই- সেটা বোঝানোর জন্য মুর্খদের সঙ্গে কখনো মুখোমুখি তর্কে যেতে হয় না। কাজই প্রমাণ দেয়। সাকিব আল হাসানও দিলেন। তিনি কতটা ভয়ঙ্কর, বিশেষ করে ঘরের মাঠে- সেটা বুঝেছিলেন অস্ট্রেলিয়ানরা। টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা বারবার সাকিবের কথাই বলছিলেন।
সেই সাকিবই ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ধরে রাখলেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সামনে জয়ের দারুণ সম্ভাবনাও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে খেলতে নেমে নাম এবং র্যাংকিংয়ের প্রতি দারুণ আস্থা এবং সম্মান দেখিয়েছেন।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই এক সঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খাতায় একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন সাকিব। টি-টোয়েন্টিতে এখন সেরার আসনে না থাকলেও ওয়ানডে এবং টেস্টে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলতি টেস্টে যে পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন, তাতে সিরিজ শেষে সেরার আসনে থাকবেনই। সঙ্গে দ্বিতীয়স্থানে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে রেটিং পয়েন্টে এগিয়ে যাবেন অনেক দুর- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
Advertisement
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন এক সময়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন সাকিব, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং তার মত ক্রিকেটারের কাছে এমন পারফরম্যান্সই প্রত্যাশা সবার। প্রথম ইনিংসে ১০ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন তামিম এবং সাকিব। দু’জন মিলে গড়লেন ১৫৫ রানের জুটি।
বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকে সাকিব-তামিম শুধু বাঁচালেনই না, একটা সম্মানজনক স্থানেও নিয়ে গেলেন তারা দু’জন। যার ওপর ভর করে, বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২৬০ রানে। ৮৪ রান করে আউট হন সাকিব। যা ছিল দলের হয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তামিম করেছিলেন ৭১ রান।
ব্যাট হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করে দলের পুরো দায়িত্বই যেন কাঁধে তুলে নিলেন সাকিব। বল হাতে যে কারণে তাকে দেখা গেলো আরও বেশি আক্রমণাত্মক। মেহেদী হাসান মিরাজ যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছিলেন অসিদের ইনিংসে, সেখানে তাল মেলালেন সাকিব। প্রথম দিন শেষ করতে তাই ৩ উইকেট খরচ করতে হয়েছে স্মিথদের। রাত তুলতে পেরেছিল মোটে ১৮।
দ্বিতীয় দিনও শুরু থেকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন সাকিব-মিরাজ। স্মিথের উইকেট তুলে নেয়ার মাধ্যমেই দিনের শুরুটা করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে অসিদের সামনে নিজেকে ক্রমশ ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত করলেন সাকিব। আজই তুলে নিলেন চার উইকেট। ম্যাক্সওয়েল-রেনশসহ বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের ফেরালেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬৮ রানে নিলেন ৫ উইকেট।
অসিদের ইনিংসে সর্বশেষ উইকেট হিসেবে যখন হ্যাজলউডকে ফেরালেন সাকিব, সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডের পাতায়ও নাম লেখা হয়ে গেলো তার। মুত্তিয়া মুরালিধরন, রঙ্গনা হেরাথ এবং ডেল স্টেইনের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট নিলেন সাকিব।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, একজন অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের আসল কাজ ব্যাট এবং বল হাতে- দু’ক্ষেত্রেই সবাইকে ছাড়িয়ে সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসান। এ যেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারেরই প্রতিরূপ।
আইএইচএস/আরআইপি