জাতীয়

চীনে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে বিপাকে অর্ধশত বাংলাদেশি

ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সুদূর চীনে এমবিবিএস পড়তে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থী তিন বছর আগে চীনের নান চ্যাং ইউনিভার্সিটি (Nan Chang University) নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়েছিলেন। সম্প্রতি দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় (চিকিৎসা শিক্ষা নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা) বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন বাতিল করায় অর্ধশত বাংলাদেশির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিপাক থেকে উদ্ধার পেতে শিক্ষার্থীরা এখন চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, চীনে বাংলাদেশের দূতাবাস ও দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। কিন্তু বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় সকলেই মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছেন।  নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি মো. আজগর হোসেন গত ২১ মার্চ বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে এই শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা শেষে ফিরে এলে তাদের রেজিস্ট্রেশন সনদ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। দূতাবাস কর্মকর্তা ওই চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির আগে অনুমোদন ছিল এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাখিলকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিএমডিসিতে পাঠিয়েছে। বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া দূতাবাস কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, শুধু দূতাবাস কর্মকর্তার চিঠি নয়, বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীদের অনেকে তার সঙ্গে দেখা করে কান্নাকাটি করেছেন। তাদেরকে সহমর্মিতা দেখানো ছাড়া আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সবশেষ তথ্যানুসারে চীনে সরকারিভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল ফ্যাকাল্টির সংখ্যা মোট ৫১টি। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষায় পড়াশুনা করার সুযোগ রয়েছে। অনুমোদন থাকলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এক নয়। তিনি বিদেশের মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরো বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। পারতপক্ষে নতুন কোনো মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি না হওয়ার ব্যাপারে মত দেন তিনি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অনুসারে অনিয়ম বা অন্য কোনো অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল হলেও শিক্ষার্থীরা যাতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বাকি শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে সে বিধান রাখা হয়েছে। বিপাকে পড়া মোট ৪১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গত কয়েকমাস যাবত সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত অন্য মেডিকেলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানায় তাদের এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দিচ্ছে না। ফলে তারা অন্য কোথাও ভর্তিও হতে পারছেন না। এদিকে আরেক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী চীনসহ বিভিন্ন দেশে ডাক্তারি পড়তে গেছেন তাদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বিএমডিসি থেকে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত ছিল না। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে এইচএসসি পাস করেই বহু শিক্ষার্থী চীনে ডাক্তারি পড়তে গেছেন। মোট কত সংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে চীনের মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে পড়াশুনা করছেন এর কোনো পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা বিএমডিসিতে নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও বিএমডিসির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চীনের বিভিন্ন তালিকাভুক্ত নিম্নমানের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। ওইসব এজেন্টরা নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে ভর্তি করে। বিএমডিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি এজেন্টরা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করালে তাদের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ ডলার কমিশনের অফার রয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনা চিকিৎসা শিক্ষা পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী চাইলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস না করে পাঁচ বছর পর সার্টিফিকেট পেয়ে যেতে পারে। পড়াশুনার কোনো অ্যাসেসমেন্ট নেই, ফলাফলে কোনো গ্রেডেশন নেই। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো চীন থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা দু`ধরনের হয়ে থাকে। তাদের কেউ যারা নিয়মিত পড়াশুনা করেন তারা এমবিবিএস পাস করে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করেন আবার যারা ফাঁকি দেন তারা মৌলিক জ্ঞানও অর্জন করতে পারেন না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, চীনে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে যান তারা এইচএসসি পাস, বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছর। দালালদের খপ্পরে পড়ে সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ব্যর্থ হলে তারা বিপথে চলে যেতে পারেন। কারণ সেখানকার জীবন খুব দ্রুত গতির। লিভ টুগেদারসহ আমোদ-প্রমোদের অবাধ সুযোগ থাকায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী বিপথে চলে যান বলে তিনি মন্তব্য করেন।এমইউ/বিএ/পিআর/এসআরজে

Advertisement