খেলাধুলা

ফতুল্লায় পারেনি, এবার মিরপুরে পারবে বাংলাদেশ?

২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল। টস করতে ফতুল্লার সেন্টার উইকেটে গিয়ে হাজির হলেন দুই অধিনায়ক। বাংলাদেশের হাবিবুল বাশার সুমন আর অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ তখন মাত্র ৬ বছরের শিশু। আর অস্ট্রেলিয়া একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকা, বিশ্বসেরা একটি দল। সেটা টেস্ট এবং ওয়ানডে- দুই ফরম্যাটেই। বাংলাদেশে সেবারই ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সফর এবং ফতুল্লায় ছিল প্রথম টেস্ট। সেই টেস্টে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হাবিবুল বাশার।

Advertisement

বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নামেন জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু আর শাহরিয়ার নাফীস। জাভেদ ওমর ২৭ রান করে আউট হয়ে গেলেও অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন শাহরিয়ার নাফীস। ১৮৯ বলে ১৩৮ রানের দারুণ ধৈয্যশীল একটি ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। এছাড়াও হাবিবুল বাশার ৭৬ ও রাজিন সালেহর ৬৭ রানের ভর করে ৪২৭ রানের লড়াকু পুঁজি অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় বাংলাদেশে।

ম্যাথ্যু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইক হাসি, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্ক কিংবা অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের মত ব্যাটিং লাইনআপের সামনে ৪২৭ রানকে বিশেষ কিছু মনে হয়নি তখনকার ক্রিকেট বোদ্ধাদের। কারণ, এমন অনেক ইনিংসকে পেছনে ফেলে প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবদানে হারানোর রেকর্ড আছে অস্ট্রেলিয়ার।

কিন্তু যতটা সহজ ভেবেছিল সবাই, ততটা সহজ হলো না অস্ট্রেলিয়ার জন্য। স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণি বিষ আর পেসার মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৬৯ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারেরমত ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে লিড নিয়ে বসলো বাংলাদেশ। তাও ছোট-খাট কোনো লিড নয়, ১৫৭ রানের। অসিদের ২৬৯ রানের মধ্যে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট একাই করেন ১৪৪ রান। মোহম্মদ রফিক নিয়েছিলেন ৫টি এবং মাশরাফি নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

Advertisement

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়েই আসল চেহারা বেরিয়ে আসে বাংলাদেশের। ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি কিংবা স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলদের বোলিংয়ের সামনে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ১৪৮ রান তুলতেই সাজঘরে ফেরে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০৫ রান। এবার আর ভুল করলো না অসিরা। অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের হার না মানা ১১৮ রানের উপর ভর করে তিন উইকেটের ব্যবধানে ফতুল্লা টেস্টে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও অধরা স্বাদটি আস্বাদন করতে পারলো না বাংলাদেশ।

ওই সিরিজের ১১ বছর পর টেস্টে প্রথম মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ। এবারও সফরকারী দল অস্ট্রেলিয়া। তবে ভেন্যু বদল হলেও ১১ বছর আগের ফতুল্লার ঘটনার পূনরাবৃত্তিই যেন ঘটলো মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। এবারও সিরিজের প্রথম টেস্ট এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই টেস্টেও যেন অনেকটা ফতুল্লার ছায়া পড়েছে।

যদিও সেই ফতুল্লা টেস্টের কেউই বাংলাদেশ বা অস্ট্রেলিয়া দলে নেই। তবুও কেন যেন, ঘটনার পূনরাবৃত্তিই ঘটতে যাচ্ছে এবারের মিরপুর টেস্টে। সেবার হাবিবুল বাশার সুমনের মত এবারও টস জিতেছে মুশফিকুর রহীম। টস জিতেই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব-তামিমের কাঁধে ভর করে ২৬০ রান তোলে বাংলাদেশ।

এবারও সবাই মনে করলো অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২৬০ রান খুব বেশি কিছু! স্টিভেন স্মিথদের সামনে তো এটা খুব মামুলি। একজন ব্যাটসম্যানই এই রান তুলে ফেলার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু ঘটলো তার উল্টোটা। ২৬০ রান করেও বাংলাদেশ লিড নিয়ে নিল ৪৩ রানের।

Advertisement

এবার আর কোনো পেসার লাগেনি। মোস্তাফিজ-শফিউল থাকলেও তাদেরকে অধিনায়ক মুশফিক ব্যবহার করেছেন যেন স্পিনারদের মাঝে-সাজে একটু বিশ্রাম দেয়ার জন্য। কারণ, বাংলাদেশের স্পিন ঘূর্ণিতেই নীল হয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ। সাকিব-মিরাজ-তাউজুলের বোলিংয়ের সামনে মাত্র ২১৭ রানেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া।

তুলতেই সব কয়জন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছেন। ফলে সেই ফতুল্লা টেস্টের মতই লীড নেয় বাংলাদেশ। এবারের লীডটা অবশ্য আগের চেয়ে কম। এবার মাত্র ৪৩ রানের লীড পেয়ছে বাংলাদেশ। যদিও এর জন্য বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংকেই দায়ী করতে হবে। নাহয় আরও বেশি রানের লীড নিতে পারতো বাংলাদেশ।

যেন ফতুল্লায় সাজানো মঞ্চই উঠিয়ে আনা হয়েছে মিরপুরে। তবে এখনও টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস বাকি। ২৬০ রান করেও লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। ফতুল্লায় ১৫৭ রানের লিড নিয়েও জিততে পারেনি টাইগাররা। দর্শকরা এ পর্যন্ত খুশি। তবে ফতুল্লার ঘটনার দ্বিতীয় পর্বের পূনরাবৃত্তি চান না বাংলাদেশের দর্শকরা। এবার নতুন কোনো কিছু মঞ্চে আসুক, এটাই চান তারা। অথ্যাৎ আগেরবারের বিপরীত কিছু। এক কথায় জয়। ফতুল্লায় না পারলেও এবার কী পারবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশকে জিততে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় লক্ষ্যই দিতে হবে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয় হলেও অসিদের জন্য ভাল সংবাদ, তারা উইকেট সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। সেই ধারণা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োগ তারা হয়তো বা করবে দ্বিতীয় ইনিংসে। ফলে বড় লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়াকে দিতে না পারলে ১১ বছর পর প্রতিশোধের পরিবর্তে আবারও সেই পুরাতন নাটকের মঞ্চায়নই হবে মিরপুরের। যদিও ক্রিকেটপ্রেমীরা কখনই চাইবে না, ফতুল্লার সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে আসুক আবার মিরপুরে।

এমএএন/আইএইচএস/আরআইপি