প্যাট কামিন্সকে ফেরানোর পরই অপেক্ষার পালা শুরু। আর একটি উইকেট পেলেই বিরল এক রেকর্ড গড়ে ফেলবেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ৭৫তম ওভারে সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন জস হ্যজলউড। সঙ্গে সঙ্গেই দুই হাত উুঁচু করে দাঁড়ালেন সাকিব। সতীর্থরা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করার পাশাপাশি আরও একটি বিরল রেকর্ড যে তিনি করে ফেললেন!
Advertisement
টেস্ট খেলুড়ে বাকি ৯টি দেশের বিপক্ষে ইতিহাসের চতুর্থ বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি যোগ দিলেন দুই লঙ্কান স্পিন গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরন, রঙ্গনা হেরাথ এবং দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনের সঙ্গে।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে সাকিবের আগে এই তিন বোলারই কেবল বাকি ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান। তাদের সঙ্গে যোগ হলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান একজন।
ক্যারিয়ার শুরুর পর গত দশ বছরে একবারও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে পারেননি সাকিব। না হয়, ইতিহাসটা গড়ে ফেলার সুযোগ হয়তো আরও আগেই পেতেন তিনি। যে কারণে অসিরাই ছিল শুধু বাকি।
Advertisement
এই প্রথম যখন অসিদের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামলেন সাকিব, তখন প্রথম সুযোগেই রেকর্ডের পাতায় নামটি লিখে ফেললেন তিনি। একই সঙ্গে সাকিব যে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, সেটাও প্রমাণ করে দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই বল এবং ব্যাট হাতে দারুণ পারফরম্যান্স দেখালেন তিনি। ব্যাট হাতে ৮৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে একাই নিলেন ৫ উইকেট।
জস হ্যাজলউডের আগে আজ সাকিব ফিরিয়েছেন প্যাট কামিন্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং ম্যাট রেনশকে। এর আগে গতকাল শেষ বিকেলে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামা নাথান লিওনকে সাজঘরে ফেরান তিনি। এছাড়া উসমান খাজার রানআউটের সময় বোলার ছিলেন সাকিবই। তার বলে শট রান নিতে গিয়েই রানআউটের কবলে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন খাজা।
সাকিব যে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার, সেটা প্রমাণ হলো আরেকবার। শুধু তাই নয়, দলের কঠিন মুহূর্তেও হাল ধরার মত সাহস দেখালেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে। ১০ রানে ৩ উইকেট চলে যাওয়ার পর যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার থরথর করে কাঁপছে, তখন দুই অভিজ্ঞ সাকিব এবং তামিম মিলে ইনিংসটাকে মেরামত করে দিলেন। ১৫৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিলেন সম্মানজনক একটি স্থানে।
সাকিব সর্বোচ্চ করলেন ৮৪ রান। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও বল হাতে সাকিব পুষিয়ে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, সত্যিকারের বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। নিজ সাম্রাজ্যে আর কারও রাজত্ব চলুক, সেটা হতে দিলেন না কোনোভাবেই।
Advertisement
অলরাউন্ডার হিসেবে ইতিমধ্যেই দারুণ দারুণ কিছু রেকর্ড নিজের ঝুলিতে জমা করে রেখেছেন সাকিব। অনেক আগেই এক ইনিংসে ১০ উইকেট এবং সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে নাম লিখিয়েছেন ইমরান খান, ইয়ান বোথামদের সঙ্গে। গতকাল ৮৪ রান করে আরও একটি রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে দেড়শ’র বেশি উইকেট এবং ৩৫০০ রানের মাইলফলকে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে পৌঁছার রেকর্ড।
মাত্র ৫০ টেস্টেই এই রেকর্ড গড়লেন সাকিব। পেছনে ফেললেন স্যার গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, জ্যাক ক্যালিস, রবি শাস্ত্রীদের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের পেছনে ফেললেন সাকিব।
আইএইচএস/এমএস/আইআই