জাতীয়

‘তহুরা হাসে খিলখিলিয়ে তৌফা হাসে মেপে’

আম্মু বলে ডাক দিতেই খিলখিলিয়ে বাবার কোলে হেসে ওঠে তহুরা। তৌফা তখন মায়ের কোলে শব্দ করে মালটার রস খাচ্ছে। তৌফা কি তহুরার মতো হাসে? জিজ্ঞাসা করতেই মা শাহিদা বেগম হেসে ওঠে বলেন, ‘তহুরা যখন তখন হাসলেও তৌফা হাসে মেপে।’ এ সময় তৌফাকে ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকাতে দেখে শাহিদা বলে, ‘এইডা (তৌফা) আমার বুদ্ধিজীবী মাইয়া, মা তুমি কি রাগ করছো।’ স্ত্রীর কথা শুনে জোরে হেসে ওঠেন দিনমজুর বাবা রাজু মিয়া।

Advertisement

সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরোনো তিনতলা ভবনের কেবিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখতে পান জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। চার সপ্তাহ আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া শিশু তৌফা ও তহুরাকে পৃথক করেন। বর্তমানে তারা সুস্থ।

প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মা শাহিদা বেগম জানান, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরে তৌফা-তহুরা জম্মগ্রহণ করে। আগামীকাল (২৯ আগস্ট) তাদের ১১ মাস পূর্ণ হবে। শিশু দুটির জম্মের পর থেকে তাদের দিন কেটেছে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে। জোড়া লাগানো দুই শিশু একদিন পৃথক হবে, সুস্থ হয়ে ওঠবে, পৃথক জামাকাপড় পড়বে -এমনটা কখনো কল্পনাও করেননি। কিন্তু চিকিৎসকসহ সকলের প্রচেষ্টায় দুই মেয়ে পৃথক হওয়ায় তারা খুবই খুশি।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন ইউনিয়নের কৃষক রাজু মিয়া ও শাহিদা বেগমের ঘরে শাহাদাত নামে পাঁচ বছর ৪ মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। অস্ত্রোপচারের সময় ছেলেটি ঢাকায় এলেও বর্তমানে নানীর বাড়িতে থাকছে।

Advertisement

শাহিদা আরও জানান, আসন্ন ঈদুল আজহায় তৌফা ও তহুরাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু ওই অঞ্চলে (সুন্দরগঞ্জ) এখন বন্যা হচ্ছে। বাড়িতে পানি না ঢুকলেও এখন বাড়ি গেলে লোকজনের ভীড় ও গরম আবহাওয়ার কারণে মেয়ে দুটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

এ ছাড়া তৌফা-তহুরার পিঠে এখনো ঘা রয়েছে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কায় শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহনুর ইসলামও বাড়ি যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন বলে জানান তিনি।

বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে না পেরে খারাপ লাগছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়ে দুটির সুস্থতার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নাই। বেঁচে থাকলে আরও অনেক ঈদ আসবে, তখন আরও বেশি আনন্দ করতে পারব, আফসোস নেই।

চলে আসার সময় মেয়েদের জন্য সবার কাছে দোয়া চান মা শাহিদা বেগম।

Advertisement

এমইউ/আরএস/এমএস