হজ ও ওমরার জন্য তাওয়াফ করা ফরজ ইবাদত। এ ইবাদত পালনে মুসলিম উম্মাহর জন্য হাতিমকে তাওয়াফের অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কাবা শরিফের সঙ্গে হাতিমকে তাওয়াফের রহস্যই বা কী? তাহলে হাতিম কী কাবা শরিফের অংশ? হাতিম যদি কাবা শরিফের অংশই হয় তবে তা উন্মুক্ত কেন?
Advertisement
হাতিমের পরিচয়হাতিম হলো পবিত্র কাবা শরিফের মূল ভিতের উত্তর দিকে পরিত্যক্ত অংশের নাম। কাবা শরিফের ৬ হাত জায়গা বাদ রেখে কাবা শরিফ নির্মাণ কর হয়। এ বর্ধিত ৬ হাত জায়গাকে হাতিম বলে। এটি বর্তমানে উন্মুক্ত অবস্থায় অর্ধ গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। হজ ওমরা ও জিয়ারতকারীদের জন্য কাবা শরিফ তাওয়াফের সময় এটিকে তাওয়াফ করতে হয়।
তাওয়াফের সময় হাতিমকে বাদ দিয়ে কাবা ঘর তাওয়াফ করলে তাওয়াফ সহিহ হবে না।
হাতিম উন্মুক্ত হওয়ার রহস্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভের ৫ বছর আগে পবিত্র কাবা শরিফকে নতুনভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ বন্যার কারণে পবিত্র কাবা শরিফ ধ্বসের পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স ৩৫ বছর।
Advertisement
কুরাইশ নেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা তাদের হালাল উপর্জন দিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। হাল উপর্জন দিয়ে কাবা শরিফ নির্মাণের দায়িত্ব অর্পিত গোত্র পতিদের ওপর। পবিত্র কাবা শরিফকে ৪ ভাগ করে একে ভাগ একেক গোত্রপতির ওপর দায়িত্ব পড়ে।
কাবা শরিফের উত্তরাংশ তথা হাতিমের অংশ নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে বনু আদি বিন কাব বিন লুওয়াই-এর ওপর। তাদের হালাল অর্থের ঘাটতি থাকায় তারা উত্তরাংশ নির্মাণে ব্যর্থ হয়।
ফলে ওই অংশের ৬ হাত জায়গা বাদ রেখেই দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। যার কারণে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নির্মিত কাবার ওই অংশটুকু বাদ পড়ে যায়। যা হাতিম বা পরিত্যক্ত নামে আজও ওই ভাবে পড়ে আছে।
উল্লেখ্য যে, ওই সময় কাবা নির্মাণ করে হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফের কোনায় স্থাপন করা হয়। তা স্থাপন নিয়ে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিল। তা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাধান করেছিলেন।
Advertisement
প্রিয়নবির ইচ্ছারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের মূল ভিত্তির ওপর পবিত্র কাবা শরিফ পুনঃনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মক্কার নও মুসলিম নেতাদের মধ্যে মন্দ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশংকায় তিনি এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চেয়েছিলেন যে, হাতিমকে অন্তর্ভূক্ত করে মূল ভিতের ওপর কাবা শরিফ নির্মাণ করবেন। যা মাটি সমান হবে এবং যার পূর্ব দরজা দিয়ে নামাজের জন্য প্রবেশ করবে এবং নামাজ শেষে পশ্চিম দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
কিন্তু কুরাইশরা কাবা শরিফ পুনঃনির্মাণের সময় তা না করে অনেক উঁচুতে দরজা নির্মাণ করেন। যাতে তাদের ইচ্ছার বাইরে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে।
প্রিয়নবির ইচ্ছার বাস্তবায়নহজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে প্রিয়নবির ইচ্ছার কথা শুনে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খেলাফতকালে ৬৪ হিজরি সনে পবিত্র কাবা শরিফ ভেঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইচ্ছানুযায়ী তা পুনঃনির্মাণ করেন।
কুরাইশদের আকৃতিতে পুনঃস্থাপনতিনি শাহাদাত বরণ করার পর ৭৩ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক মারওয়ানের নির্দেশে গভর্ণর হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তা পুনরায় ভেঙ্গে কুরাইশদের নির্মিত ভিত্তিতে রূপদান করেন। যা আজও বিদ্যমান।
উমাইয়া খেলাফতের পর আব্বাসীয় খেলাফতের সময় খলিফা মাহদি ও হারুণ প্রিয়নবির ইচ্ছা প্রতিফলন ঘটাতে চাইলে হজরত ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের বলেন, ‘আপনারা কাবা শরিফের নির্মাণকে বাদশাহদের খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করবেন না।’ যার ফলে কাবা শরিফ আজও কুরাইশদের নির্মিত অবস্থার ওপর বিদ্যমান রয়েছে।
সর্বোপরি কথা হলো-হাতিম পবিত্র কাবা শরিফের অংশ। তাওয়াফের সময় হাতিমকে কাবা শরিফের অন্তর্ভূক্ত মনে করে তা তাওয়াফ করতে হবে। এ স্থানে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা মানুষের দোয়া কবুল করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাওয়াফসহ যাবতীয় ইবাদত ও দোয়া কবুলে কাবার অংশ হাতিমকে যথাযথ ইজ্জত ও সম্মান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর