খেলাধুলা

আমরাই ড্রাইভিং সিটে : সাকিব

দুই বন্ধু তামিম ইকবাল (৭১) এবং সাকিব আল হাসান (৮৪) শুরুর ধাক্কা সামলে এগিয়ে দিয়েছিলেন অনেকটা পথ। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে দুজনার জোড়া হাফ সেঞ্চুরি ও ১৫৫ রানের পার্টনারশিপে বিপদ কাটিয়ে বড় স্কোরের মজবুত ভিত তৈরি হয়েছিল; কিন্তু বাকিরা তা কাজে লাগাতে না পারায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হলো ২৬০ রানে।

Advertisement

জবাবে পড়ন্ত বিকেলে ব্যাটিং ধ্স অস্ট্রেলিয়ারও। ১৪ রান তুলতেই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, ওয়ান ডাউনে নামা উসমান খাজা এবং নাইটওয়াচ ম্যাচ হিসেবে নামা নাথান লিওন সাজঘরে। দিন শেষ হলো সেই ৩ উইকেটেই ১৮ রান নিয়ে। সব মিলিয়ে প্রথম দিন শেষেই একটা জমজমাট টেস্টের পূর্বাভাস।

অথচ যে টেস্টের ফল নিষ্পত্তির চেয়ে বৃষ্টির শঙ্কাই ভুগিয়েছিল বেশি। বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। আবহাওয়া বার্তায় প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টির হানা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, সে ম্যাচের প্রথম দিন এক পশলা বৃষ্টি আসলেও দিনের খেলা বিঘ্নিত হয়নি একটুও।

পড়ন্ত বিকেলের সোনা রোদে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে সারা দিনে ৮৭.৫ ওভার খেলাও হলো। আর তাতে দু'দলের ১৩ উইকেটের পতন।

Advertisement

রোববার ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটি কেমন কাটলো টাইগারদের? দিন শেষে কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে? মুশফিক বাহিনী কি একটু সুবিধাজনক অবস্থানে, নাকি স্টিভেন স্মিথের দলও প্রায় সমান্তরালে?

খেলা শেষে ঘুরে ফিরে এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। বাংলাদেশ ভক্তদের একটা বড় অংশ নিজ দলকে এগিয়ে রাখতে চাইলেও কারো কারো মতে দু'দলই সমান সমান।

যারা মনে করেন প্রথম দিন শেষে দু'দল সমান-সমান, তাদের যুক্তি- বাংলাদেশেরও তো ১০ রানে তিন উইকেটের পতন ঘটেছিল। সৌম্য, ইমরুল ও সাব্বিরের মত স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গিয়েছিলেন। আর দিন শেষে অসিদেরও ১৪ রানে তিনজন আউট।

বাংলাদেশ অমন খারাপ শুরুর পরও আড়াইশোর বেশি রান করেছে। এখন অস্টেলিয়াও যে অতদুর যাবে না, তাইবা কি করে বলা? স্বাগতিক ভক্ত ও সমর্থকদের এমন সংশয় ও দ্বিধা বিভক্তি কেটে যাবে টিম বাংলাদেশের প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসারে এক মন্তব্যে। দিনের চালচিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাকিব বলে ওঠেন, ‘আমরাই এখন ড্রাইভিং সিটে।’

Advertisement

এটুকু শুনে হয়ত ভাবছেন সাকিব বুঝি আত্মতুষ্টিতে ভুগে এমন কথা বলেছেন। আসলে তা নয়। সাকিবের পরের কথাগুলোয় আছে ভাল করার তাগিদ, ‘তবে কালকে একটা নতুন দিন এবং আমাদের আরো সাতটা উইকেট নিতে হবে। সেটাও আমাদের মাথায় আছে। এছাড়া ওদের ভালো কয়েকজন ব্যাটসম্যানও আছেন। আমাদের ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। যেহেতু টেস্ট ম্যাচ। প্রতিটি দিনেই নতুন নতুন পরিস্থিতি আসে। সে গুলো ঠিকভাবে সামলে নেয়াটা খুব জরুরি।’

সাকিব কেন নিজ দলকে চালকের আসনে বসাতে চেয়েছেন? তারও ব্যাখ্যা আছে। সে ব্যাখ্যায় যাবার আগে রোববার বাংলাদেশ ইনিংসের দুটি আউটের বর্ণনা শুনে নিন। দুটিই লাঞ্চের পরের। তামিম ও সাকিবের জমে ওঠা জুটি ভাঙ্গতে অনিয়মিত অফ স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে বল তুলে দিলেন অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ।

ওই ওভারের তিন নম্বর ডেলিভারি তামিমকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিল। প্রথমত পার্টটাইম অফ স্পিনারের বল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি টার্ন করে অফ-মিডলে পিচ করে আরও বাইরে বেরিয়ে গেল। তামিমের প্রত্যাশার চেয়ে খানিক থেমে একটু বেশি লাফিয়েও উঠলো। আর সে কারণেই কাট করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না তামিম। নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েও পারলেন না। দেরিতে আসা বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে চলে গেল পয়েন্টে ওয়ার্নারের হাতে।

এরপর অফ স্পিনার নাথান লায়নের মিডল ও অফ স্ট্যাম্পে পিচ করা ডেলিভারি কিছুটা বাড়তি টার্ন ও বাড়তি উচ্চতায় আসায় শটের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলেন না সাকিবও। ২০৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩৩ বল খেলার পরও ওই লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি তাকে খানিক হতবিহ্বল করে দিল। শটের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় স্লিপে অজি অধিনায়ক স্মিথের হাতে গিয়ে জমা পড়লো সাকিবের ব্যাটে লাগা বল।

দিন শেষে ওই দুটি আউটের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলে ওঠেন, ‘প্রথম সেশনের চেয়ে দ্বিতীয় সেশনে আরও ভাল ব্যাট করছিলাম তামিম আর আমি; কিন্তু দুজনই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে আউট হয়ে যাই। আমাদের উইকেট ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভিন্ন। তাই আগাম মন্তব্য করা কঠিন।'

সাকিবরাও চেয়েছেন রান আড়াইশ হোক। তাহলে চ্যালেঞ্জিং স্কোর হবে, ‘আমরা চেয়েছিলাম আড়াইশোর ঘরে পৌঁছাতে। নাসির, মিরাজ এমনকি শফিউল সেখানে পৌঁছাতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বল শুরু থেকেই ঘুরছিল। বাউন্সও ঠিক সমান ছিল না। কখনো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু লাফিয়ে উঠেছে। আবার কোনো কোনো বল নিচুও হয়েছে। এরকম উইকেটে স্বচ্ছন্দে খেলা কঠিন। আমাদের টার্গেট ছিল আড়াইশো। তা করা গেছে। এখন প্ল্যান একটাই- যতটা সম্ভব ভাল জায়গায় বল ফেলে অজিদের যতদুর সম্ভব কম রানে বেঁধে ফেলা।’

আগামীকাল দ্বিতীয় দিনের করণীয় কি? সাকিবের কথা, ‘আমার মনে হয় এখন খেলার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই আছে। উইকেট পাওয়া না পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ভাল জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করার কাজটি ঠিকমত করাই লক্ষ্য।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম