হজের জন্য হজরত ইবরাহিম আলাহিস সালামের ঘোষণাই ছিল ‘ঐশী আজান’। যে ঘোষণা মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের নিকট পৌছে দিয়েছেন। যে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর উপস্থিত হয় হজের এ মহা সম্মিলনে। আর সমস্বরে ঘোষণা করেন-
Advertisement
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক’ আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে হজের ঘোষণার নির্দেশ দেয়ার আগে হজের জন্য বাইতুল্লাহকে স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে দেন এবং তা তাওয়াফকারী, নামাজ আদায়কারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আমি ইবরাহিমকে বাইতুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ- তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দণ্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৬)
অতঃপর আল্লাহ তাআলার ঐতিহাসিক নির্দেশেই হজের জন্য ঐশী আজান দিয়েছিলেন তাঁরই খলিল হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা তাঁর খলিলের সে ঘোষণা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে পৌছে দিয়েছিলেন।
Advertisement
সুরা হজের ২৭ নং আয়াতে সে ঘোষণা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন, ‘আর মানবজাতির জন্য হজের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে এবং ক্লান্ত উটের পিঠে সওয়ার হয়ে। তারা আসবে দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে।’
আল্লাহর ঘোষণায় হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালাম পবিত্র কাবাঘর তৈরি করেন। তাওয়াফকারীদের জন্য তাওয়াফের স্থান পরিচ্ছন্ন করেন। যাতে তারা এখানে নামাজ, রুকু ও সিজদা আদায় করতে পারেন।
অতঃপর এ আয়াতের মাধ্যমে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছিলেন হজ পালনে বাইতুল্লায় আসার জন্য। এ ছিল এক ঐতিহাসিক ঐশী আজান।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাবাঘর তৈরির পর আবু কুবাইস পাহাড়ের চূড়ায় উঠে হজের আজান দিলেন। আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের আজান মানুষের দ্বারো দ্বারে পৌছে দিলেন।
Advertisement
আল্লাহর খলিলের আজান শুনে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ হজ পালন করতে কাবাঘরে উপস্থিত হয়। তাদের কণ্ঠে আজো ধ্বনিত হয় সেই ঐতিহাসিক স্লোগান-
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।’
অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির; ‘আমি উপস্থিত, আপনার কোনো শরিক নেই ,আমি উপস্থিত; নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও অনুগ্রহ আপনারই আর সব সাম্রাজ্যও আপনার; ‘আপনার কোনো শরিক নাই।’
আবু কুবাইস পাহাড়ে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিমের সে ঐতিহাসিক আজানের আহ্বানে আজো লাখো লাখো মুসলিম উম্মাহ হজ পালনে পবিত্র মক্কা নগরীর বাইতুল্লাহ, আরাফাতের ময়দানে, মিনা এবং মজদালিফায় উপস্থিত হয়।
এখন হয়তো আগের মতো উট বা ঘোড়ার বাহন নেই, তবে বর্তমান সময়ে এ আগমন ঘটে বিমানে, জাহাজে, গাড়িতে আবার পায়ে হেঁটে। আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করতেই অন্তরে একান্ত অনুভূতি নিয়ে হাজির হয় বাইতুল্লাহ পানে।
বাইতুল্লাহ জিয়ারতে মানুষকে শারীরিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। কষ্ট শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় হজের এ দীর্ঘ সফেরে। যেখানে নেই কোনো লোক দেখানো লৌকিকতার কোনো সুযোগ।
শুধুমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনই যে সফরের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। এ কারণেই কষ্টের এ সফরের বিনিময় শুধুমাত্র জান্নাত। যার বিনিময় জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
প্রিয়নবি বলেছেন, ‘লৌকিকতামুক্ত হজ পালনে মানুষ হয়ে যায় সে দিনের মতো নিষ্পাপ; যে দিন তাঁর মা তাকে প্রসব করেছে।’
তাই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ঐশী ঘোষণার হজ হোক গোনাহ মুক্ত, ঝগড়া-বিবাদমুক্ত, অশ্লীল কথাবার্তামুক্ত, হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত, দুনিয়ার সব কামনা-বাসনা তথা লোক দেখানো রিয়ামুক্ত।
মুসলিম উম্মাহর এ হজের কার্যক্রম যেন শুধুমাত্র দৈহিক কষ্টেই সীমাবন্ধ না থাকে। তা যেন হয় আত্মিক উপলব্ধি ও মাওলার প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। হজের উপলব্ধি ও প্রেম যেন থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। তবেই হজ পালনকারী অতিবাহিত করবে জীবনের সোনালী সময়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবাইকে উল্লেখিত গুণে নিজেকে রাঙানোর তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় লোভ-লালসা, রিয়া ও গোনাহমুক্ত জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন।
সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সবাইকে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সে ঐশী ঘোষণায় শরিক হয়ে ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি-এর সঙ্গে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর