এগার বছর পর বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজ। সেই ২০০৬ সালে শেষবার বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল রিকি পন্টিংয়ের দল। এরপর আর আসেনি। বাংলাদেশও টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যায়নি, ঘুরিয়ে বললে অসিরা টাইগারদের টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানায়নি।
Advertisement
তার মানে প্রায় একযুগ পর টাইগারদের সাথে অসিদের টেস্ট সিরিজ। বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের সর্বোচ্চ উৎসাহ-আগ্রহ; কিন্তু মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়েই শুরুর আগে হৈ চৈ নানা কথা। গুঞ্জন। জল্পনা-কল্পনা।
প্রথম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল অজিদের বাংলাদেশে আসা নিয়েই। স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা বাংলাদেশে খেলতে আসবেন কি না- তা নিয়েই ছিল চরম অনিশ্চয়তা। এর আগে নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে খেলতে আসেনি অজিরা। তবে এবার আর ওই নিরাপত্তার ধুয়া তুলে নয়, নিজেদের সমস্যায় জর্জরিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বোর্ডের সাথে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের আর্থিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদ।
এক সময় মনে হচ্ছিল সফর বুঝি বাতিলই হয়ে যাবে। যাক শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড) আর ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্ব মিটেছে। আর্থিক বিষয়গুলোর হিল্লে হয়েছে। নিজেদের মধ্যে রফা হবার কারণেই অবশেষে বাংলাদেশে অজি ক্রিকেট দল।
Advertisement
রাজধানী ঢাকায় পা রাখার ৪৮ ঘন্টা না যেতেই নতুন বিপত্তি। একমাত্র প্র্যাকটিস ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে দেখা দিল গণ্ডগোল। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম? বিকেএসপি, সিলেট না ইউল্যাব মাঠ- তা নিয়ে অনেক পানি ঘোলা হলো।
বিকেএসপি যেতে সময় বেশি লাগে। টেস্টের আগে রাজধানীর বাইরে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ খেলে লাভ হবে না। আর ইউল্যাব ঠিক ঐ মানের নয়। ফতুল্লা স্টেডিয়ামও পুরোপুরি তৈরি নয়। জমে থাকা পানির দুর্গন্ধ আর আউটফিল্ড পুরোপুরি প্রস্তুত নয়- এই অজুহাতে ফতুল্লায় খেলতে অপারগতা অজিদের। বিপত্তির এখানেই শেষ নয়। আকাশ চোখ রাঙ্গাচ্ছে । বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
আবহাওয়া রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে আগামীকাল থেকে ৩১ আগস্ট মানে প্রথম দিন থেখে পঞ্চম ও শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিদিনই নাকি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে তুতীয় তিন ছাড়া বাকি চার দিন ৯০ থেকে ৮০ ভাগ বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে ঢাকা টেস্টের ভবিষ্যত অন্ধকার।
বৃষ্টি ভোগাবে কি ভোগাবে না, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সত্য হবে কি হবে না- তার উত্তর দিবে সময়। খেলা ভালোয় ভালোয় শেষ হোক আর নাই হোক, আগামীকাল ২৭ আগস্ট থেকে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যে টেস্ট শুরু হচ্ছে, তাতে থাকছে এক নতুনত্ব।
Advertisement
যা হবে রীতিমত ইতিহাস। এমনিতে ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এটা হবে দু’দলের পাঁচ নম্বর টেস্ট। এর আগে দুই দল চারটি টেস্ট খেলেছে। যার দুটি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে। আর দুটি অস্ট্রেলিয়ায় (২০০৩ সালে)। ইতিহাস এমন সাক্ষী দিলেও কাল রোববার আরেক নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। দু’দলের কাছেই প্রতিপক্ষ একদম নতুন।
সে কী কথা? এই না বলা হলো যে দু’দল আগেও আরও চারটি টেস্ট খেলেছে, তাহলে নতুন প্রতিপক্ষ হয় কী করে? প্রশ্ন উঠছে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তারপরও বলা, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাল যে ২২ জন ক্রিকেটার মাঠে নামবেন বা খেলবেন- তারা প্রতিপক্ষের কাছে সত্যিই নতুন।
কী গোলমেলে ঠেকছে? জটিল মনে হচেছ বিষয়টি? নাহ, জটিলতার কিছুই নেই। আসলে দু’দলের লাইনআপে এমন একজন ক্রিকেটারও নেই যারা বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার আগের চার টেস্টের অন্তত একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছেন।
অর্থাৎ দু দলের ১৪ + ১৪ = ২৮ জন ক্রিকেটারের সবার টেস্ট অভিষেক হয়েছে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর। কাজেই মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, হ্যাজলউড, ম্যাক্সওয়েল ও নাথান লিওনের কেউই আগে অপরের সাথে টেস্টে মুখোমুখি হননি।
কি করে হবেন? বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ছাড়া দু’দলের বাকি সবার টেস্ট অভিষেকই যে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের পরে। দু’দলের একজন মাত্র ক্রিকেটার যার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের বাংলাদেশ- অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে। তিনি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম।
যার টেস্ট অভিষেক ২০০৫ সালের মে মাসে; কিন্তু ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট অভিষেকের পর বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া টেস্ট সিরিজে অজিদের বিরুদ্ধে দলে ছিলেন না মুশফিক। কাজেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এটাই তার প্রথম টেস্ট।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথের অভিষেক ২০১০ সালের জুলাইয়ে। ডেভিড ওয়ার্নারের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের টেস্ট জীবন শুরু আরও পরে; ২০১৩ সালে।
দু’দলের ক্রিকেটাররা মাঝের ১১ বছর সীমিত ওভারের ফরম্যাটে অংশ নিলেও টেস্টে এই প্রথম মুখোমুখি হবেন। সে আলোকেই দু’দলের কাছেই প্রতিপক্ষ একদম নতুন। সে কারণেই বলা বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার নতুন টেস্ট শুরু আগামীকাল।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি