জাতীয়

পশুর হাটে হকার নয়

রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এবার কোনো হকার বসতে দেবে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায়সহ যেকোনো অনিয়ম ঠেকাতে উপস্থিত থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। হাটের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ১০০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার বসানো হবে। দূরবীণ হাতে হাটের সার্বক্ষণিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন পুলিশ সদস্যরা। এবার হাটকেন্দ্রিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

আগামী ২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। এদিন আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনে সারা বিশ্বের মুসলমানরা পশু কোরবানি দেবে। এ বছর দেশে কোরবানির জন্য প্রস্তুত সোয়া কোটি পশু। ঢাকায় ২২টি অস্থায়ীসহ মোট ২৩টি হাটে বিক্রি হবে কোরবানির পশু। ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটগুলোতে থাকবে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন। তাই বেপারি ও ক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীর প্রত্যেক পশুর হাটে থাকবে পর্যাপ্তসংখ্যক সাদা পোশাক ও ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি হাটের ইজারার চৌহদ্দির (নির্দিষ্ট স্থান) বাইরে কোনো অননুমোদিত হাট যাতে না বসে সেদিকে খেয়াল রাখবেন তারা। প্রত্যেক হাটে থাকবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। জাল টাকা শনাক্তের জন্য পুলিশ কন্ট্রোল রুমে থাকবে ইলেকট্রিক মেশিন। এছাড়া হাট এলাকায় ডিএমপি ও ইজারাদারদের পক্ষ থেকে বসানো হবে সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিড টেলিভিশন) ক্যামেরা।

ডিএমপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে হাট পরিচালনার জন্য ইজারাদারদের কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডিএমপি জানায়, ইজারাদারদের হাটে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর লাগানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হাসিল আদায়ের হার বড় করে টানাতে হবে। পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং হাটের চৌহদ্দি বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে হবে। হাটে রাখতে হবে সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম। পশুর হাট ও তার আশপাশে অজ্ঞান পার্টি এবং জাল নোট সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক ব্যানার দৃশ্যমানভাবে টানানো ও প্রচার এবং প্রচারণা চালাতে হবে।

Advertisement

ক্রেতাদের কাছ থেকে যাতে নির্ধারিত হাসিলের অতিরিক্ত আদায় করা না হয় সে বিষয়ে নজরদারিতে থাকবেন ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত পরিচালনা করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এবারের হাটে ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হকার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইজারাদাররা নির্দিষ্ট দোকান ঠিক করে দেবেন এবং পাইকারদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করতে পারবে না সেসব দোকান। এগুলোও নজরদারি করবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার জাগো নিউজকে বলেন, হাটের নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার এবং ইজারাদারদের সঙ্গে সমন্বয় সভা হয়েছে। আমরা ইজারাদারদের ভলেন্টিয়ার নিয়োগসহ নানা নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়া পুলিশের কন্ট্রোলরুমে সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে। সবমিলে এবার হাটকেন্দ্রিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্প্রতি হাট ও পশুর চামড়া বহনের নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পশুর হাটের নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে অনুমোদিত ২৩টি পশুর হাটে পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকবে। পশুবাহী ট্রাক যেখানে যেতে চায় সেখানে যেতে দিতে হবে। কোনো অবস্থায় তাকে বাধা দেয়া যাবে না। এটা সরকারি নির্দেশ। প্রত্যেকটি ট্রাক তার গন্তব্য স্থানের নাম বড় করে ব্যানার বানিয়ে ট্রাকের সামনে ঝুলিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন, কোনো ভাবেই এক হাটের পশু অন্য হাটে জোর করে নামানো যাবে না। যদি এমন কেউ করে তাকে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অপরাধে আইনের আওতায় আনা হবে।

যেসব স্থানে বসছে পশুর হাটঢাকার ২২টি পশুর হাটের মধ্যে ১৩টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় পড়েছে। সেগুলো হচ্ছে- মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর-খিলগাঁও রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ,পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা।

Advertisement

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুড়িল, বসিলা, মিরপুর ডিওএইচএস, উত্তরার ১৫নং সেক্টর, খিলক্ষেত বনরূপা, আশিয়ান সিটি, ভাটারার সাঈদনগর, আফতাব নগর ও মিরপুরের ৬নং সেকশন।

এআর/ওআর/জেআইএম