সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যাত্রীবাহী বাস সার্ভিসের অবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের ভাঙাচুরা ও ফিটনেসবিহীন বাস দিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে হয়।
Advertisement
শুধু তাই নয়, নামে বিরতিহীন সার্ভিস হলেও পথে পথে যাত্রী বিরতি দিয়ে যাত্রীদের উঠানামা করানো হয়। যাত্রী উঠিয়ে রাস্তা থেকে গ্যাস নেয়া হয়।
এ জন্য প্রায় প্রতিদিন যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বচসা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে বাসের টিকিটের দাম বাড়লেও যাত্রী সেবায় কোনো উন্নয়ন হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগে করে আসলেও বাস মালিকরা নির্বিকার। আন্দোলনের মুখে সময় বেঁধে দেয়া হলেও বাস সার্ভিসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ রুটে উন্নতমানের বাস চলাচল করে। কিন্তু সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে লক্কড়ঝক্কড় বাস চলাচল করছে। উন্নতমানের বাস চলাচলের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
Advertisement
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এর ফলে প্রতিনিয়ত সাধারণ যাত্রীরা নানা দুর্ভোগসহ সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই যাতায়াত করে থাকেন। উন্নতমানের বাস সার্ভিস চালু জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মতো দিরাই-সিলেট, ছাতক-সিলেট ও সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়কেও ভালো বাস সার্ভিস নেই।
সূত্র মতে, সুনামগঞ্জ-সিলেটসহ অভ্যন্তরীণ সবকটি সড়কে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে। এ সড়কগুলোতে ৪ টি বাস মালিকদের সংগঠন রয়েছে। দুটি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ করা হয় সিলেট থেকে বাকি ২টি সুনামগঞ্জ থেকে।
সুনামগঞ্জ নতুন বাসস্ট্যান্ড, দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর ও সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে যাতায়াতকারী বাসগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। বাসের বসার সিট খুবই ছোট। এতে বসতে কষ্ট হয় যাত্রীদের। এ নিয়ে প্রায়ই বাসের চালক ও হেলপারের সাথে বচসা হয় যাত্রীদের।
এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবদুল মোমিন বলেন, দেশের সবচেয়ে বাজে ও পুরাতন বাস এই সড়কে চলাচল করে। অন্যস্থানে প্রতিনিয়তই যেখানে নতুন বাস সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম। এখানে পুরাতন বাস চালান বাস মালিকরা।
Advertisement
বাসযাত্রী সাব্বির আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিরতিহীন বাস চালু রয়েছে। কিন্তু বিরতিহীন বাসগুলো সড়কের বিভিন্ন স্থানে থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে। এ সম্পর্কে কথা বললে যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন বাসের চালক ও হেলপাররা।
জানা গেছে, দুর্ভোগে অতিষ্ঠ যাত্রীরা অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে এ সড়কে উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিলে বাস মালিক ও শ্রমিকদের বাধার কারণে উন্নতমানের বাস চালু করতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বাস মালিক ও শ্রমিকদের কাছে যাত্রীরা অনেকটাই জিম্মি। উন্নতমানের বাস চালু হলে জেলাবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমবে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে উন্নত বাস চালুকরণের দাবিতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে মানববন্ধন করেছে সিলেটস্থ পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, এ সড়কে যানবাহনগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এ অঞ্চলের মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবি উন্নত বাস চালুকরণের।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মাইক্রো-মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, এসব বাস শুধু সুনামগঞ্জে নয় অন্যান্য রোডে ও চলাচল করে থাকি। তবে যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যাত্রাপথে যাত্রী হয়রানি অগ্রহণযোগ্য। এ নিয়ে নানা অভিযোগ সরকারের নজরে রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, যাত্রী দুর্ভোগের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এ ব্যাপরে কড়া নির্দেশনা দিয়ে আছে। এ ব্যপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যাত্রী হয়রানি প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এ সম্পর্কে কথা বলার জন্য বিআরটিএ সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ছামির মাহমুদ/এএম /আইআই