দু’জন নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। শুক্রবার চণ্ডিগড়ের পাঁচকুলার একটি বিশেষ আদালত ওই রায় ঘোষণার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাম রহিম সিংয়ের ভক্তদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছে।
Advertisement
হরিয়ানা এবং দিল্লিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাম রহিম সিংয়ের ভক্তদের সংঘাতে আরও দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদেরকে।
তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ধর্ষণের দায়ে গুরমিতের সাজা কী হবে, সোমবার আদালত সেই সিদ্ধান্ত জানাবে। তার আগেই গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করাকে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলছে হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে।
Advertisement
রাস্তায় রাস্তায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছেন রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা। একাধিক রেলওয়ে স্টেশন ও পেট্রোল পাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী নয়াদিল্লিতেও এই বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একাধিক বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য চন্ডিগড়সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, কয়েকজন লোক পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও, অনেকেই মারা গেছেন সংঘর্ষে আহত হয়ে।
রায় ঘোষণার আগে থেকেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য জুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। একইসঙ্গে এলাকাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা বিক্ষোভ শুরু করলেই পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
সহিংসতা শুরুর আশঙ্কায় শুক্রবার সকাল থেকেই পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে মোতায়েন করা হয় ৫০ হাজার পুলিশ। নিহতের ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকাগুলোতেই।
Advertisement
১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর ও হনুমানগড়ে। পুলিশ একটি স্টেডিয়ামও অধিগ্রহণ করে রেখেছে বহু লোককে গ্রেফতার করার আশঙ্কায়।
নিজের সাংগঠনিক দফতর থেকে শ’খানেক গাড়ি নিয়ে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছান রাম রহিম সিং। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতে চত্বরে প্রবেশের অনুমতি পায় মাত্র দুটি গাড়ি।
রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে যে দুজনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, সেটা ১৫ বছর আগের ঘটনা। ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেটাও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে। ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই নারীকে তিনি ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
২০০৭ সাল থেকে শুনানি চলার পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করা হয় ধর্মগুরুকে। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি, আনন্দবাজার, এনডিটিভি, নিউজ ১৮ ডটকম
কেএ/আইআই