এই ছিটোত ৬৮ বছর থাকি হামরা (আমরা) খাঁচাত বন্দী ছিনু বাহে, এবার হামরা পরিচয় দিবার পামো (পারবো) হামরা বাংলাদেশের মানুষ। মিছা কথা কয়া হামার নাতিক স্কুলোত ভর্তি করাই ছুনুক (করিয়েছিলাম)। এবার হামার নাতি মেট্রিক পাশ করছে। মিছার দিন শ্যাষ বাহে, এবার সত্যি পরিচয়ে বড় হইবে হামার ছোয়াল (ছেলে) বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহলের উত্তর গোতামারী বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ছকবার আলী। তিনি বলেন, হামার ছিটোত অনেক ছোয়াল আছে কেহ নেখাপড়া করে না। ছোয়ালগুলাক স্কুলোত নিগাইলে মাস্টার কাগজ চায় হামরা এলা কাগজ কোনটে পাই, সে জন্যে স্কুলোত আর ভর্তি করাং (করাই) না। নেখাপড়া শিখলে হামাক কি চাকুরি দিবে সরকার?সরেজমিনে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার নির্জন কোলাহলমুক্ত একটি গ্রাম ১৩৫ এর ১ ও ২ উত্তর গোতামারী ছিটমহল। এখানকার বেশীরভাগ পরিবার দরিদ্র। মানুষের দুঃখ গাঁথা ৬৮ বছরের দীর্ঘ কাহিনী। সদ্য মুক্তি পাওয়া মানুষগুলোর আনন্দের শেষ নেই। এখানকার জীবনমান নিম্নমানের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এমনকি নেই কোনো হাটবাজার। এখানে সুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত শিশুদের সংখ্যা বেশি। তারপরও ৬৮ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিল মুক্তির আশায়। আজ মুক্তির পথে ছিটবাসীরা। নতুন করে বাচাঁর স্বপ্ন দেখছেন কাটাতারে ঘেঁষা পরিবারগুলো। ছিটমহলে বিদ্যালয় না থাকায় ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় কোমলমতি শিশুদের। বেশীরভাগ শিশুর পরিচয় না থাকায় অনেকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। অনেকে পরিচয় গোপন রেখে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।ছিটমহলবাসী তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। এই ছিটমহলে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ হবে ছিটের শিশুরা লেখাপড়া সুযোগ পাবে এমনটাই আশা করেন তারা। দেখা গেছে উত্তর গোতামারী ছিটমহলে ৪ বছর ধরে একটি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি স্কুল পরিচালনা করছেন। স্কুলে ২৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২৫ জনই ছিটবাসীর সন্তান। সবাই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন। বেবী আক্তার ও জামিরুল ইসলাম নামে দুজন শিক্ষক আছেন তারা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাঠদান করেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বই, খাতা, কলম এনজিওটি বিনা পয়সায় সরবারহ করে। স্কুল শিক্ষক জামিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, আমি ছিটমহলের বাসিন্দা। গত ১৫ বছর আগে বিএ পাশ করে বসে আছি নাগরিকত্ব আর পরিচয় না থাকায় কোনো চাকরিতে আবেদন করতে পারিনি তাই ব্র্যাক স্কুলে শিক্ষকতা করছি।ছিটমহলের বাসিন্দা মোক্তার আলী জাগো নিউজকে জানান, ব্র্যাক স্কুলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্ম নিবন্ধন সনদ লাগে না তাই ওই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। রবিউল হাসান/এমজেড/এমএস
Advertisement