কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের নয়টি উপজেলায় প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও ভারতীয় গরুর আমদানি বেশি হলে প্রস্তুত রাখা এসব পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খামারিরা।
Advertisement
স্থানীয় গরু মালিকেরা বলছেন, অনেক কষ্ট করে ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারে বিভিন্ন জাতের গরু পালন করেছেন। কিন্তু প্রতিবছর ভারতীয় গরুর আমদানি অনেক বেশি হওয়ায় তারা দাম পান না। এবার ভারতীয় গরুর আমদানি এখনও কম থাকলেও সপ্তাহের মধ্যেই বেড়ে যাবে। তখন আমাদের খামারের গরুগুলোর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি।
শাহজাদপুরের শিমুলতলী গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি আলী হোসেন চৌধুরী জানান, তাদের গ্রামে ৫০টি পরিবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশি, ক্রসবিড, নেপালীসহ বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজাকরণের জন্য পালন করেছেন। তিনি নিজেও দেশি জাতের ৮টি গরু পালন করেছেন। এ গরুগুলোই আগামী সপ্তাহে হাটে তুলবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আসার কারণে ভাল দাম না পেলেও এবার আশাবাদী শাহজাদপুর পোতাজিয়া গ্রামের সবচেয়ে বড় খামারি মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, ঈদ সামনে রেখে এবার ৫২টি দেশি ও শঙ্কর জাতের গরু পালন করেছেন তিনি। এবারও ভালো দাম আশা করছেন মোহাম্মদ আলী।
Advertisement
উল্লাপাড়া উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের আব্দুল মতিন খান জানান, এ বছর তিনি দেশি ও শঙ্কর জাত মিলিয়ে ৭টি গরু ৭ মাস ধরে পালন করছেন। গরুগুলো প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন তিনি। বাজার ভালো হলে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদী।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস ছামাদ জানান, উপজেলায় ৯ হাজার ২০০টি ক্ষুদ্র খামারি রয়েছে। এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার গড়ে উঠছে। গরুর খামার গড়ে আয়ের পাশাপাশি নিজেদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি করেছে অনেকেই। এছাড়া এ অঞ্চলে মৌসুমি খামারও রয়েছে। এসব খামারে গরু মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। এসব মৌসুমি খামারে ও কৃষকের বাড়িতে প্রতি বছর ৪-৫টি করে গরু পালন করা হয়।
তিনি আরও জানান, শাহজাদপুরে গড়ে ওঠা গরুর খামার থেকে দুধ, মাংসের জন্য গরু এবং কুরবানীর উপযুক্ত করে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন হাটে। খামারীরাও গরু লালন পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হারুন-অর রশিদ জানান, সিরাজগঞ্জ জেলায় আসন্ন ঈদে কোরবানির জন্য এক লাখ ৬৯ হাজার গরু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ১ লাখ পশুর চাহিদা রয়েছে। অতিরিক্ত ৬৯ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, অবৈধ এবং ক্ষতিকর উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণরোধে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। এছাড়া কোরবানির পশুর হাটগুলোতে মনিটরিং টিম থাকছে।
তবে মৌসুমের শুরুতেই গরু কিনে ক্ষতিকর স্টেরয়েডে মোটাতাজা করছেন মুনাফালোভী মৌসুমি খামারিরা এমন অভিযোগ উঠলেও এখনো এমন কোনো খবর নেই বলে দাবি করেছেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/পিআর