মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মায় তীব্র ভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়েছে। এতে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা ইতোপূর্বে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
Advertisement
গত কয়েকদিনে উপজেলার চরজানাজাত, বন্দরখোলা, মাদবরচর ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৭শ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪৪টি পরিবার অন্য জায়গায় গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, মালেক তালুকদার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজিদ সরকার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মজিদ বেপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদের দ্বি-তল ভবন।
এলাকাবাসী জানায়, এসব এলাকায় প্রায় ৪শ পরিবার পদ্মার ভাঙনে সহায়সম্বল হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব। এছাড়া তলিয়ে গেছে সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট। রোপা আমন, বোনা আমন, শাকসবজিসহ প্রায় ৪শ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, চরাঞ্চলে নদীভাঙনের শিকার অসহায় মানুষগুলো তাদের ঘরবাড়ি দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছে এবং বন্যার পানি ও নদীভাঙনের কারণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ জানান, বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনসীমানা থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। গত দুইদিনে যেভাবে নদীভাঙন হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২/১ দিনের মধ্যে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। চরাঞ্চলের প্রায় সহস্রাধিক ছেলেমেয়ে এ বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করে। এ বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেলে এ অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
শিবচর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত আ. মজিদ বেপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য কমিটিকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তবে অপর দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবন অপসারণের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ তিনটি বিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।
চরজানাজাত ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোতালেব বেপারী জানান, গত পাঁচ বছর ধরেই নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছর প্রায় দুইশ থেকে তিনশ একর জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। গত ২৫ বছর ধরে এই চরাঞ্চলে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাকা ভবন, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
Advertisement
চরজানাজাত ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান সরকার বলেন, একদিকে নদীর ভাঙন অপরদিকে বন্যার পানি, চরাঞ্চলবাসী এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান আহমেদ জানান, এ বছর নদীভাঙন বেড়েছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া চরজানাজাত ইউনিয়নে আরও ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অনেক মানুষের বসবাসের জমিটুকুও নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রায় ৪শ পরিবার মুহূর্তেই সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে।
এ কে এম নাসিরুল হক/বিএ