আগে কখনও কেউ ভাবেনি বা কখনও কল্পনা করেনি, যে পিরোজপুরে সম্ভব হবে আঙুরের চাষাবাদ। যে ফল দেশের বাইরে থেকে এসে থাকে তার ফলন দক্ষিণ বাংলার সমতল ভূমিতে চাষ হবে। রসালো ফল আঙুর ছিল এই অঞ্চলের মানুষের কাছে দূর্লভ। তবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বরইবুনিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরে হুমায়ন কবির। নিজের উঠনে এ অসম্ভব কাজটি করছেন বেশ সাফল্যের সাথে, যা সবার নজর কেড়েছে।
Advertisement
উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের বরইবুনিয়া, মাটিভাঙ্গা, মাহামুদকান্দা, চর-মাটিভাঙ্গা, বরইতলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শতাধিক বাড়িতে এ রকম শখের বসে বাসিন্দারা আঙুর চাষ করছেন। বরইবুনিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত হুমায়ন কবির সুদক্ষ হাতে গড়ে তোলা আঙুর বাগানের থোকা থোকা আঙুর বাম্পার ফলন সকলকে আঙুর চাষে যেমন আগ্রহী করেছে, তেমনি এই অঞ্চলের ফলন দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে শুরু করে অসংখ্য কৃষক ও বৃক্ষ প্রেমিক লোকজন এ বাগান পরিদর্শন করে এখন মুগ্ধ।
হুমায়ন কবির জানান, বাড়ির আঙিনায় অথবা পতিত জমিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া যায় তা তিনি প্রমাণ করেছেন। সুযোগ পেলে আঙুর চাষ এ এলাকায় বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হতে পারে।নিজের গড়া আঙুর ফল বাগানের পরিচর্যায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হুমায়ন কবির
কি ভাবে এ ফল চাষ শুরু হলো সে কথা জানাতে তিনি বলেন, বছর তিনেক আগে এলাকার সুনীল নামে একজন ফলগাছ বিক্রেতা তার বাড়ির উঠানে একটি আঙুর গাছ লাগিয়ে দেন এবং দাম নেন চারা প্রতি ৩০০ টাকা করে। গাছ বিক্রেতা তাকে গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে বলেন। সে অনুযায়ী গাছের যত্ন নেয়া শুরু করে দেন। গাছের জন্য মাচা করে দেন যাতে করে আঙুর গাছ বিস্তার লাভ করতে পারে।
Advertisement
তিনি আরো জানান, প্রথম বছরই গাছে ১৪/১৫ থোকা আঙুর ধরে এবং যা ছিল একটু টক। দ্বিতীয় বছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৪০ থোকা আঙুরে। গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করায় দ্বিতীয় বছরের তুলনায় এখন আঙুরের আকার যেমন বড় হয়েছে তেমনি টক ভাব কেটে মিষ্টতা এসেছে বেশ।
স্থানীয় ফল গাছ বিক্রেতা সুনীল মন্ডল বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে এ পেশায় জড়িত আছেন এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় থেকে ভাল জাতের আঙুর গাছ সংগ্রহ এবং কলম তৈরি করে মানুষের বাড়ি বাড়ি বিক্রি চারা প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা নেন। তিনি নিজেই গিয়ে গাছ গুলো লাগিয়ে আসেন এবং মাঝে মাঝে দেখ ভাল করেন।
এই অবিশ্বাস্য কাজটি কিভাবে সাফল্য পাচ্ছে এ প্রসঙ্গে পিরোজপুরের কৃষিবিদ জগৎ প্রিয় দাস বিশু জানান, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি মোটেই আঙুর চাষ উপযোগী নয়। তারপরও শখের বসে কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন ভাবে এ চাষ করছেন। সঠিক পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ করার কারণে এক্ষেত্রে সাফল্য পাওযা যাচ্ছে।
মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ননী গোপাল মজুমদার জানান, এলাকায় প্রায় ১২০টি বাড়িতে আঙুর চাষ হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মী নূর মোহাম্মদ মিয়া নিজ বাড়িতে এ চাষ শুরু করে এ এলাকায় আঙুর চাষের পথ দেখিয়েছেন।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সত্যিই এটি একটি সু-সংবাদ। অন্য কোন কৃষক আঙুর চাষে উদ্যোগী হলে সব রকমের সহযোগীতা করা হবে।
হাসান মামুন/আরএস