আইন-আদালত

ষোড়শ সংশোধনী রায় নিয়ে আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে ঘিরে সুপ্রিম কোর্টে চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছেন।

Advertisement

সরকার সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেন। আওয়ামী লীগ সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন।

অপরদিকে আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস বলেন, প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসে প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম হুমকি দেয়া নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতি ওপেন কোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের ভয় দেখিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাই তিনি এরই মাঝে শপথ ভঙ্গ করেছেন, সেহেতু তিনি (প্রধান বিচারপতি) অচিরেই পদত্যাগ করবেন।

Advertisement

তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিকভাবে যে মন্তব্য করেছেন এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। তিনি সংসদকে হেয় করেছেন। তিনি মহিলা সংসদ সদস্যের বিষয়ে কটূক্তি করে নারীদের হেয় করেছেন। তাদের হেয় করে গোটা নারী সমাজকে হেয় করেছেন। সর্বোপরি তিনি তার রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি নাকি কারও সার্ভেন্ট না। তিনি প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তা না। তিনি হলেন নিজেই মাস্টার। আমরা তার নিন্দা জানাই।

ব্যারিস্টার তাপস আরও বলেন, গত পরশু দিন প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে চোখ রাঙানির মাধ্যমে এই বক্তব্য দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের মতো প্রধানমন্ত্রীকে নাকি তিনি পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসে প্রধানমন্ত্রীকে এ রকম হুমকি দেয়া নজিরবিহীন। এটা শপথ ভঙ্গের সামিল। সুতরাং আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে এই রায়ের অপ্রাসঙ্গিক, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক বক্তব্য প্রত্যাহারসহ সম্পূর্ণ রায় বাতিলপূর্বক যেহেতু তিনি এরই মাঝে শপথ ভঙ্গ করেছেন তাই তিনি অচিরেই পদত্যাগ করবেন। অন্যত্থায় আগামী অক্টোবর থেকে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করার আন্দোলনের কর্মসুচি দিতে আমরা বাধ্য হব।’

একই অনুষ্ঠানে ইউসুফ হোসেন হুমায়ন প্রধান বিচারপতিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ওপেন কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন, কি হয়েছে পাকিস্তানে দেখেছেন। সুপ্রিমকোর্ট কি পারে।’ আমি একটি কথা বলতে চাই, বাংলাদেশ ইজ নট পাকিস্তান এটা মনে রাখতে হবে। এ বাংলাদেশ রক্তের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এটা অসাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কাজেই ওই সব কথা বলে পার পাবেন না।

আগামী ২৪ আগস্ট আমরা এ দাবিতে আবার মিলিত হব। আমরা এর আগে বলেছিলাম ২৪ তারিখের মধ্যে আপনার অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এখনও সময় আছে আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

Advertisement

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিক বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ আইনজীবীদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। আজকে পঞ্চম দিনের মতো টানা আন্দোলন করে চলেছে সংগঠনটি। সংগঠনের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, সাবেক বিচারপতি মুনসুরুল হক চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা, সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, সানজিদা খানম এমপি, আওয়ামীপন্থী আইনজীবী নেতা আজহার উল্লাহ ভুইয়া, রবিউল আলম বুদ প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরাবিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের উত্তর হলে প্রতিবাদ সভা করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।

প্রতিবাদ সভায় অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করার কারণে আপনি নিজেই পদত্যাগ করুন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি একা এই রায় দেননি। আপিল বিভাগের সকল বিচারপতি একমত হয়ে এ রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতিকে বলব, সরকারের কিছু ব্যক্তি ছাড়া ১৬ কোটি মানুষ আপনার সঙ্গে আছে।

এফএইচ/ওআর/এমএস