ফিচার

নায়করাজের যত অর্জন

বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর বর্ণিল জীবনের অবসান ঘটে। অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। অভিভাবকহীন করে গেলেন চলচ্চিত্র পরিবারকে।

Advertisement

নায়করাজের স্মৃতির উদ্দেশে তুলে ধরছি তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন। যা তাঁকে অমর করে রাখবে। বাঙালি এবং বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবে তাঁর এ সফলতা।

সফলতার শুরু১৯৬৪ সালে একেবারে শূন্যহাতে শহরে পাড়ি জমান রাজ্জাক। তখন জীবিকার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নাটকটি দিয়ে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ‘তেরো নং ফেকু ওস্তাগার লেন’র ছোট একটি চরিত্র দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। পরে ‘কার বউ’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘ডাক বাবু’ নামের বেশকিছু ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করেন। তবে সফলতার দেখা মেলে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিতে।

আরও পড়ুন- তোমরা চলচ্চিত্রের পাশে থেক : রাজ্জাক

Advertisement

নায়করাজ উপাধিপ্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী (আজাচৌ)। যাকে সবাই ‘খোকাভাই’ নামেই চেনেন। এই খোকাভাইয়ের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল রাজ্জাকের। তাঁর ‘নায়করাজ’ উপাধিটিও খোকাভাইয়ের দেওয়া। ‘প্রতিনিধি’ সিনেমায় অভিনয়ের পরই তাঁকে নায়করাজ উপাধি দেওয়া হয়।

উপাধি সম্পর্কে খোকাভাই রাজ্জাককে বলেছিলেন, ‘উত্তমকুমার যদি ওপার বাংলার মহানায়ক হতে পারে তুমিও আমাদের নায়করাজ।’

সেরা চলচ্চিত্র১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবির মাধ্যমে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রাজ্জাক। এরপর ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। এরমধ্যে বেহুলা, ছুটির ঘণ্টা, অনন্ত প্রেম, নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, বেঈমান, বড় ভালো লোক ছিল, রংবাজ, বাদী থেকে বেগম, অন্ধ বিশ্বাস, মাটির ঘর, অশিক্ষিত, বদনাম, আগুন নিয়ে খেলা, প্রতিনিধি, বাবা কেন চাকর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন- হে প্রিয়, আর হবে না দেখা!

Advertisement

ভিলেনসিনেমায় নায়ক চরিত্রের পাশাপাশি মতিন রহমান পরিচালিত ‘অন্ধ বিশ্বাস’ সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।

পরিচালনা১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে রাজ্জাকের। এছাড়াও ‘সৎ ভাই’, ‘বাবা কেন চাকর’সহ বেশকিছু সিনেমা পরিচালনা করেন।

প্রযোজনারাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন্সের ব্যানারে ১৯৭৩ সালে জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ ছবিটির মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন রাজ্জাক। এরপর ১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমায় পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন তিনি।

আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর সাহিত্যকর্ম : ভাষণ থেকে রোজনামচা

কিছু গানরাজ্জাক অভিনীত সিনেমার বেশকিছু গান আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। সেগুলো হচ্ছে-‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’, ‘তোরা দেখ দেখ রে চাহিয়া’, ‘হৈ হৈ হৈ রঙিলা’, ‘সে যে কেন এলো না’, ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তা চলেছি একা’ এবং ‘প্রেমেরই নাম বেদনা’র মতো গান উল্লেখযোগ্য।

পুরস্কারনায়করাজ রাজ্জাক মোট পাঁচ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে ‘কি যে করি’, ১৯৭৮ সালে ‘অশিক্ষিত’, ১৯৮২ সালে ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ১৯৮৪ সালে ‘চন্দ্রনাথ’, ১৯৮৮ সালে ‘যোগাযোগ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্যও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়াও ২০০৩ সালে ইন্দো-বাংলা কালা মিউজিকে খান আতাউর রহমান আজীবন সম্মাননা, ২০০৯ সালে বাচসাস পুরস্কার, ২০১২ সালে ইফাদ ফিল্ম ক্লাব পুরস্কার ও বাবিসাস পুরস্কার, ২০১৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন। দেশের বাইরে ২০১৭ সালে কলকাতার ১৬তম টেলি-সিনে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘আজীবন সম্মাননা’ দেওয়া হয় তাঁকে।

আরও পড়ুন- জাগো নিউজে অপুর আনন্দঘন মুহূর্ত (দেখুন ছবিতে)

হলো না শেষনায়করাজের কর্মকাণ্ড অল্পকথায় শেষ করা কঠিন। তবুও বলবো, জীবনের এতো এতো অর্জন সত্যিই তাঁকে বিশেষায়িত করে রেখেছে। তিনি অমর হয়ে থাকবেন শিল্প-সংস্কৃতিতে। চির জাগরুক থাকবেন ভক্ত-দর্শকের অন্তরে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

এসইউ/জেআইএম