প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। একই সঙ্গে প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বৈধ করার সুবিধা থাকছে এ বাজেটে। বৃহস্পতিবার বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ প্রস্তাব করেন। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কালো টাকা সম্পর্কে একটি বাক্য উচ্চারণ না করায় বিগত দিনের মতোই নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বহাল থাকছে। এ টাকা যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। এছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়েও বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ থাকছে।এ জন্য অর্থ আইন ২০১৫ সংশোধনের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯-ই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ ৩-এ নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হ্রাসকৃত করহার খাতে কালো টাকা বৈধ করা যাবে না। এছাড়া কর অব্যাহতি প্রাপ্ত খাতেও কালো টাকা অর্জনের ঘোষণা দিয়ে বৈধ করা যাবে না। তবে জমি ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ফ্ল্যাট বা আবাসিক ভবন কেনার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহারে ৪০ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে কর দেয়ার পর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। এছাড়া এলাকাভেদে আবাসন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ কর দিয়েও এ অর্থ বৈধ করা যায়। এটি এলাকাভেদে প্রতি বর্গমিটারে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। পৌর এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের ওপর ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে বিদ্যমান ১৫০০ টাকার স্থলে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০০ বর্গমিটারের নিচে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।এছাড়া সিটি কর্পেরেশন ও জেলা পর্যায়ে ২০০ বর্গমিটারের ওপর ১০০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা ও ২০০ বর্গমিটারের নিচে ৭০০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে গত অর্থবছরে প্রায় পৌনে তিন হাজার ব্যক্তি সরকার প্রদত্ত সুবিধা নিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূল ধারায় এনেছেন। এর মাধ্যমে সরকার কর পেয়েছে ৪৪ কোটি টাকা।প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (রিহ্যাব) সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বাজেটে প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে (অপ্রদর্শিত আয়) বৈধ করার সুযোগ রেখেছে এটি ভালো উদ্যোগ। এতে বিনিয়োগ বাড়বে এ খাতের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। এবারের বাজেট প্রস্তাবের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আগেই ছিল। তবে এবার সংশ্লিষ্ট বিষয়টি আইন সংশোধনের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাই।এদিকে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে এমন-ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংসদীয় কমিটির প্রধানদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সাংসদরা চান কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বহাল থাকুক। তাই আগামীতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে।প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের আকার হবে দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেট অপেক্ষা ১৮ শতাংশ বেশি। এসআই/বিএ/এমএস
Advertisement