অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের সময় বাড়ছে, কমছে সুদহার

শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে আবারও তৎপর সরকার। এরই অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত ৯০০ কোটি টাকার তহবিলের ঋণের সুদ কমছে একই সঙ্গে আবেদনের মেয়াদও বাড়াচ্ছে সরকার।

Advertisement

এ তহবিল থেকে ঋণের আবেদনের জন্য আরও দুই বছর সময় পাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ঋণের সুদহারও কমানো হচ্ছে দেড় শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ৯০০ কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৪৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি অর্থ বিতরণের জন্য সময় ছিল চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি এই তহবিলের ঋণকে আরও আকর্ষণীয় করতে সুদহার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। দুই-তিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সুদহার কমানোর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের কাছে তহবিলের সুদহারও আকর্ষণীয় করতে হবে। এ কারণে তা বর্তমানে সাড়ে ৭ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। এর মধ্যে তহবিল পাবে ৪ শতাংশ, আইসিবির সার্ভিস চার্জ ১ শতাংশ এবং বাকি ১ শতাংশ সুদ পাবে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগকারীদের ঋণ প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস।

Advertisement

এছাড়া তহবিলের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন এবং আরও বেশি সংখ্যক বিনিয়োগকারীকে এ তহবিলের আওতায় আনতে যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকার এরই মধ্যে তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে যথা সময়ে ফেরত দিয়েছে, তাদেরকে দ্বিতীয় মেয়াদে ঋণ দেয়া যেতে পারে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদের হার ৯ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এর পরও তহবিল থেকে ঋণ বিতরণে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই আবারও সুদ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আগের বছরের মতো এবারও ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার কথা মাথায় রেখে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো তহবিল থেকে ঋণ নিতে সেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উপাত্ত বলছে, ৯০০ কোটি টাকার তহবিলের ২৫৭ কোটি টাকা অবণ্টিত রয়ে যায়, যার বিপরীতে ঋণের আবেদন এসেছিল মাত্র ৮২ কোটি টাকার।

বিশেষ এ পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে ৬৪২ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেয়া হয়। অন্যদিকে এ সময়ের সুদসহ তহবিলে ফেরত এসেছে ৬৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তাছাড়া ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে তহবিলের পাওনা ছিল ৩১ কোটি টাকা।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, এই তহবিল ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তবে ব্যাংকগুলোতে সুদের হার কমে যাওয়া ও বাজার ভালো হওয়ায় তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া কিছু ব্রোকারেজ হাউস ঋণ নিতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেখায়নি।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের অর্থ পেতে আবেদনের সময় আগামী ১৯ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এ সম্পর্কিত তদারকি কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ঋণ কমানোসহ অর্থ পেতে আবেদনের সময় আরও দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠান হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা এ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেন। সে হিসাবে এ তহবিল থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা মোট ৯ লাখ ১৭ হাজার ৮২৮ জন। এর মধ্যে ডিএসইর বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের গ্রাহক ৭ লাখ ১৪ হাজার ২৩২ জন, সিএসইতে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৯ এবং বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাককের সংখ্যা ৪১ হাজার ৫৭৭ জন।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক পুন:র্বিনিয়োগ তহবিলের প্রথম কিস্তি বাবদ আইসিবিকে ৩০০ কোটি টাকা দেয়। এ সময় ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ঋণের কঠিন শর্তের কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলো ওই তহবিল থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী ছিল না।

পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণের শর্ত শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে ২০১৪ সালের জুনে সহায়তা তহবিলের অর্থ বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, এ তহবিল থেকে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে মাত্র ২৫ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঋণ সহায়তা গ্রহণ করেছেন।

এমইউএইচ/এমআরএম/আরআইপি