জাতীয়

বাড়ছে নদী ভাঙনের ঝুঁকি, চার জেলায় সতর্কতা

চলতি বছর নদী ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গবেষণা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে।

Advertisement

ভাঙনের তীব্রতা ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কুড়িগ্রামের রৌমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, রাজবাড়ীর পাংশা ও কালুখালী, শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার মানুষকে সতর্ক করার কাজ করছে।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্থানীয় পর্যায়ে নদী ভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস, সতর্কীকরণ, প্রচার ও করণীয় বিষয়ক পরামর্শ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, সিইজিআইএস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন, জলবায়ু ও বড় নদীগুলোর চ্যানেল পরিবর্তন এবং বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার কারণে দেশে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর নদীর তীরবর্তী অসংখ্য মানুষ বসতভিটাসহ আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ অবস্থায় নদী ভাঙনের আগাম তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া খুবই জরুরি।

Advertisement

ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো রক্ষা করতে বক্তারা নদীর তীর সংরক্ষণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ‘২০১৭ সালের জন্য নদী ভাঙনের পূর্বাভাস’ শীর্ষক উপস্থাপনাপত্র তুলে ধরেন সিইজিআইএস’র রিভার, ডেল্টা অ্যান্ড কোস্টাল মরফোলজি ডিভিশনের জুনিয়র স্পেশালিস্ট সুদীপ্ত কুমার হোড়। সভায় ‘নদী ভাঙনের পূর্বাভাস জ্ঞাপন : পূর্ববর্তী বছরসমূহের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক উপস্থাপনাপত্র তুলে ধরেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির (ডিএমসিসি) সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট মো. জাফর ইকবাল।

সভা সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন (ডিএমসিসি) কর্মসূচির পরিচালক গওহার নঈম ওয়ারা ও সিইজিআইএস’র উপনির্বাহী পরিচালক ড. মমিনুল হক সরকার। আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কাবিখা-১) সৈয়দা মেহেরুন নেছা কবীরসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, নদী ভাঙনের পূর্বাভাস প্রদানে প্রযুক্তিগত যে দক্ষতা আমরা অর্জন করেছি, তা তখনই সার্থক হবে, যদি তা আমরা সময়মতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। সেই সঙ্গে নদী শাসনের কর্মকাণ্ডে এ তথ্যসমূহ ব্যবহার করতে পারি।

Advertisement

ড. মমিনুল হক সরকার নদী ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বন্যা, সাইক্লোনের কারণে ব্যক্তির ক্ষতি হলেও সে তার জায়গা হারায় না। কিন্তু নদী ভাঙনে মানুষ তার জমি বা ভিটে-বাড়িও হারায়। তাই এ সমস্যা নিরসনে অমাদের নদী ব্যবস্থাপনার দিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্র্যাকের ডিএমসিসি ২০১৬ সাল থেকে সিইজিআইএস’র কারিগরি সহযোগিতায় ‘নদীভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস ও পরামর্শ’ নামক প্রকল্প বিভিন্ন জেলায় বাস্তবায়ন করে আসছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চলতি বছর আটটি জেলার মোট ১৬টি উপজেলার ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কীকরণ-বার্তা আরও কিভাবে কার্যকরভাবে পৌঁছে দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

এমএ/জেডএ/এমএআর/আরআইপি