বার্সার ঘরে তাহলে তুষের আগুন জ্বলছে। যেটা এবার বলতে গেলে উসকেই দিলেন নেইমার ডি সিলভা জুনিয়র। পিএসজির হয়ে যখন তুলুজের বিপক্ষে অসাধারণ ডিসপ্লে চলছিল নেইমারের, তখনও তার হৃদয়ে খেলা করছিল বার্সেলোনা। ২২২ মিলিয়ন উইরোর রেকর্ড ট্রান্সফারের বিনিময়ে পিএসজিতে চলে আসার পর অবশেষে বার্সেলোনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই মুখ খুললেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। সরাসরি বলে দিলেন, ‘তাদের (বার্সার বর্তমান বোর্ড) ক্লাব চালানোর ক্ষমতা নেই। তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। বার্সা আরও ভালোভাবে চলতে পারে। ক্লাবটি আরও ভালো পরিচালনা প্রত্যাশা করে।’
Advertisement
মাসখানেক আগেই বার্সা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা দানি আলভেজ। আট বছর বার্সায় থাকার পরও ক্লাব ছাড়ার প্রাক্কালে কর্মকর্তাদের আচরণে আঘাত পাওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছিলেন তিনি। দল বদল করে যাওয়ার পর ঠিক আলভেজের সুরেই বার্সা কর্মকর্তাদের বিঁধলেন নেইমার।
তুলুজের বিপক্ষে ৬-২ গোলের বিশাল জয়ে অসাধারণ খেলা প্রদর্শণ করেন নেইমার। নিজে করেছেন দুটি গোল। অ্যাসিস্ট করেছেন আরও দুটিতে। বলতে গেলে পুরোটাই ছিল নেইমারময় ম্যাচ। এরপরই সংবাদ সম্মেলনে এসে বার্সা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘বার্সেলোনা বোর্ড নিয়ে আসলে কী বলবো? তবু কিছু কথা বলতে হয়। কারণ, তাদের নিয়ে আমার কিছু কথা জমা আছে। আমি তাদের ওপর চূড়ান্তরূপে হতাশ।’
Advertisement
তাহলে কী বার্সায় কাটানো চার বছরে নেইমার অসুখি ছিলেন? সেটাও না। নেইমার বলেন, ‘চার বছর কাটিয়েছি আমি বার্সায়। সেখানে আমি খুবই সুখি ছিলাম। সুখি অবস্থাতেই আমি বার্সায় শুরু করেছিলাম। সময়টাও কাটিয়েছি বেশ সুখে। এরপর যখন ক্লাব ছাড়লাম তখনও সুখি ছিলাম। তবে, তাদের ওপর নয়।’
এরপরই নেইমার জানালেন বার্সার বর্তমান কর্মকর্তাদের দায়িত্বে থাকা উচিৎ নয়। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে আমি বলব, তাদের দায়িত্বে থাকা মোটেও উচিৎ নয়। বার্সেলোনা এর চেয়েও অনেক বেশি ভালো করার দাবি রাখে। এটা সবাই জানে।’
নেইমার দাবি করেন, বার্সায় তার সাবেক সতীর্থরাও সবাই বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর খুশি নন। সবাই অসন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘সাবেক সতীর্থদের অখুশি এবং অসন্তুষ্ট দেখলে আমার খারাপই লাগে। কারণ সেখানে আমার অনেক বন্ধু তৈরি হয়েছে। তাদের জন্য যেটা ভালো হবে আমি সেটাই আশা করবো। তাহলেই কেবল তারা আগের সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্যদের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে।’
লা লিগা শুরুর আগেই ইউরোপিয়ান মিডিয়ায় গুঞ্জন, লিওনেল মেসির প্রতিনিধি দেখা করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে। মেসি নিজেও ইনস্টাগ্রামে ফলো করা শুরু করেছেন ম্যানসিটিকে। এ থেকেই গুঞ্জন, মেসিও ক্লাব ছেড়ে যেতে চান। এর পেছনে বড় কারণও আছে। মেসির সঙ্গে এখনও পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেনি বার্সা। গত সপ্তাহেই বার্সা সহ-সভাপতি জর্দি মেস্ত্রে বলেছিলেন, খুব দ্রুতই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করবেন তারা।
Advertisement
আবার একদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে ইনিয়েস্তা বলে দিয়েছেন, বার্সায় নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। এক বছর পর চুক্তি শেষ হবে তার। এখনও পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি নবায়নের কোনো চিন্তা নেই ক্লাবের। ইনিয়েস্তা জানান, যে বিষয়টা তিন বছর আগে কল্পনাই করতে পারিনি- এখন সেটাই করতে হচ্ছে।
মেসির ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন, নেইমারের চলে যাওয়া এবং ইনিয়েস্তার সাক্ষাৎকারই প্রমাণ করছে- বার্সার ভেতরে ভেতরে তুষের আগুণ ধিকি ধিকি করে জ্বলছে। শেষ পর্যন্ত নেইমারের সরাসরি বক্তব্য সেই আগুনটা বলতে গেলে উসকেই দিল। এবার বার্সা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যু থেকে শুরু করে পুরো বোর্ডের আসন পুরো টলটলায়মান হয়ে উঠলো- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আইএইচএস/পিআর