আমি জানি, কিছু লোক আমায় গালমন্দ করবে। করেও সব সময়। অন্যের নিন্দে করা স্বভাব যাদের, তার বাইরে বেরুবে কী করে তারা? কিন্তু আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, মনে হয় সব সময়, যা সত্য তা লিখি। যা সত্য তা বলি। সঠিক তথ্যটি দিই। সত্য নয় যা, সঠিক নয় যা, তা বলে, লিখে লাভ কী? অন্যকে মিথ্যে বলে, ভুল বলে, খুশি করবার মধ্যে কোন আনন্দ নেই। আমার আনন্দ সত্য বলায়, লেখায়, তা কারো ভালো লাগুক কী না লাগুক।
Advertisement
দেশে বন্যা চলছে। ভয়াবহ বন্যা। অনেক দিন পর মানুষ এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এ দেশে যে কোন দুর্যোগে মানুষ দাঁড়িয়েছে, মানুষের পাশে। ভাঙা মানুষ ওঠে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে স্বপ্ন দেখেছে, নতুন দিনের। হারতে হারতে জীবনের কাছে জিতে যাওয়া মানুষ আমরা। এবারও আমরা বন্যা মোকাবেলা করতে পারবো। মানুষের পাশে দাঁড়াব, এমন প্রত্যাশা আমার- বেশি কিছু নয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখলাম, কিছু লোক বন্যায় সহায়তাকে কোরবানির বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, বলছেন, বলবার চেষ্টা করছেন- কোরবানি না দিয়ে সেই টাকা বন্যার্তদের দিন। কোন এক তারকা দম্পতি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তারা এবার কোরবানি দেবেন না, কোরবানির টাকা বন্যার্তদের দান করবেন। এই স্ট্যাটাসটি আরো অনেককে একই ধরনের স্ট্যাটাস দিতে, ভাবনা ভাবতে সহায়তা করছে।
আমি কাউকে ছোট করতে চাচ্ছি না, কাউকে খাটো করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, যারা এমন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, বন্যার্তদের প্রতি দানকে, কোরবানির বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন, তারা কি ধর্মের বিধান বা নিদের্শনা সম্পর্কে অবগত আছেন? ধর্মে কি বলা হয়েছে, তারা কি জানেন? উত্তরটি যতদূর সম্ভব ‘না’ বোধকই হবে। ধর্ম সম্পর্কে, ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে জানলে কেউ এমন কথা বলবেন না, এ আমি নিশ্চিত।
Advertisement
জেনে রাখা ভালো, কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি ইবাদত বা উপাসনা। যাদের সঙ্গতি রয়েছে কোরবানি দেবার, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক কোরবানি। কোরবানিকে বিকল্প বা ‘অল্টারনেট’ করার কোন সুযোগ নেই, সামর্থবানদের জন্য। সুতরাং যারা এই বার্তাটি দিচ্ছেন, তারা খুব ভুলের মধ্যে বসবাস করছেন, বলতে বাধ্য হচ্ছি।
নবী করিম মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে। ধর্ম ও ধর্মীয় বিধান আসলে নির্দিষ্ট রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী চলে। আমি বিশ্বাস করি কি না করি, পালন করি কি না করি, ধর্মের বিধানকে ধর্মের রীতি অনুযায়ীই পালন করতে হবে, কোন বিকল্প নেই। তাই এটার পরিবর্তে আসুন টাকাটা অন্য কোথাও দেই, অমনটি বলা অবিমৃষ্যকারিতা, অযৌক্তিকও বটে।
বন্যার্তদের দান, কোরবানির বিকল্প হতে পারে না কখনও। এটি কোরবানি না করার, ধর্ম পালন না করার অজুহাত মাত্র। যে প্রকৃত মানবিক, প্রকৃত মুসলিম সে ‘অল্টারনেট’ খুঁজবে না কখনও। হয়তো তার সীমিত সামর্থ্য, সে তার মধ্যেই সমন্বয় করবে। কোরবানি বাদ দেবে না। আর আসল কথা হচ্ছে, যে দেবার নয়, সহযোগিতা করার মানসিকতা যার নেই অন্যকে, সে বিকল্প খুঁজবেই। অন্যান্য বছরও তো বন্যা হয়েছে, তখন আমরা দান করেছি কোথা থেকে? তখন যেখান থেকে করেছি, এখনও করতে হবে সেখান থেকেই।
ইচ্ছেই বড়, যে কোন কাজের। বন্ধুরা মিলে মাস্তি, হ্যাং আউট, ফাইভ স্টারে ডিনার, ক্লাবপার্টি এসব বাদ দিতে বলছি না, বলছি কোরবানি বাদ দাও- এ কেমন কথা? খবরে প্রকাশ, ঢাকায় আসছেন এক সময়ের সাড়া জাগানো পর্নো তারকা সানি লিওন। সানি লিওনের রগড় সামনে থেকে দেখার সর্বনিন্ম টিকিট মূল্য ১৫ হাজার টাকা। এসব বাহুল্য, নিন্ম রুচির বিনোদন তো বাদ দেবার কথা কারো মুখে ভুলেও শুনছি না।
Advertisement
আমি জানি, ‘তথাকথিত’ প্রগতিশীলরা আমায় ‘অপ্রগতিশীল’ বলবেন। বলবেন, আমি মানবতাবাদী নই। তাদের জন্য বলছি, ভুল ব্যাখ্যা করবেন না, ভুল পড়বেন না আমাকে। আমি বলতে চাইছি, মানুষ কোরবানিও করবে, দানও করবে, ত্রাণও দেবে। ত্রাণ দেয়া অবশ্যই কোরবানি বন্ধ করে নয়। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যে, না জানার মধ্যে কোন মুক্তচিন্তা নেই। মূর্খতায় চারপাশ উপচে পড়ছে। নিজেদের নিজেরাই মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল বলে দাবি করছে। এই প্রগতিশীলরা না জানে বিজ্ঞান, না জানে ধর্ম। আর মনে রাখতে হবে, অজ্ঞতার মধ্যে আর যাই থাকুক, প্রগতিশীলতা নেই।
পুনশ্চ: আমার অগ্রজ আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক স্ট্যাটাস আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, লেখাটি লিখতে। আমার অনেক লেখারই অনুপ্রেরণা তিনি। মেধাবীজন, আলোকিত মানুষ। যে আমাকে বরাবরই পড়তে, জানতে উৎসাহিত করে, কখনও কখনও বাধ্যও করে। তার প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
লেখক : সম্পাদক, আজ সারাবেলা। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মিডিয়াওয়াচ। পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন। সদস্য, ফেমিনিস্ট ডটকম, যুক্তরাষ্ট্র।
এইচআর/পিআর