দেশজুড়ে

‘সেদিন আমাদের চিকিৎসা দিতেও নিষেধ করা হয়েছিল’

‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা বেঁচে গেলেও নারীনেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী প্রাণ হারান। সেদিনের সমাবেশে উপস্থিত হাজারের অধিক নেতা-কর্মী শরীরে এখনও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণায় দিন যাপন করছেন। তার মধ্যে আমি নিজেও একজন।

Advertisement

যতদূর মনে পড়ে সেদিন আমিসহ আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তখন অস্থায়ী সেই ট্রাকের কাছেই ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম বাম পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় তৎকালীন চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টার বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন আমার গায়ের শার্ট খুলে পা বেঁধে ফেলেন। যদিও সে সময় খোকনও আহত হয়েছিলেন। পরে আমাকে একটি কাভার্ড ভ্যানে তুলে দিলেও ভ্যানটি উল্টে যায়। এ ধকল কাটিয়ে ওঠার পর ভ্যানচালককে আমি সিকদার মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। সেসময় আরও আহত হয়েছিলেন শরীয়তপুরের কৃতিসন্তান সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রয়াত জননেতা আবদুর রাজ্জাক।

যখন আমাদের সিকদার মেডিকেলে ভর্তি করা হয়, তখন পুলিশ গিয়ে আমাদের চিকিৎসা দিতে নিষেধ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার চাচা আমাদের সবাইকে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং সার্বিক খোঁজখবর নেন। এক সপ্তাহ পর আমাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের এ্যাপোলো হাসপাতালে। দুই স্থানে আমার শরীর থেকে ১০টি স্প্লিন্টার বের করা হলেও এখনো বাম পায়ে ১২টি স্প্লিন্টার বহন করছি।’

জাগো নিউজের একান্ত সাক্ষাৎকারে শরীয়তপুরে নিজবাড়ির উঠনে বসে এভাবেই দুর্বিসহ সেদিনের স্মৃতিচারণ করলেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জাকসু ভিপি একেএম এনামুল হক শামীম।

Advertisement

একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, আগস্ট শোকের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকদের শকুন দৃষ্টি ছিল বেঁচে যাওয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার ওপর। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৯ বার হামলা চালালেও চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও ঘুমাতে পারি না। দুঃসহ সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায়। নানানজন নানাভাবে এ হামলার বিশ্লেষণ করলেও ১৫ আগস্টের কালো দিবস ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা বলে আমি মনে করি। ১৫ আগস্ট ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করার দিন আর ২১ আগস্ট ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ব্লুপ্রিন্ট।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ঊনত্রিশ বছর পর শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে আবারও ঘাতকের দল এই আগস্টেই জোট বেঁধেছিল। শোকাবহ রক্তাক্ত আগস্ট মাসেই আরেকটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়নার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস।

তিনি বলেন, ভয়াল সেই হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারিয়েছেন তার দুই কানের স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি। আহত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী দেহে স্প্লিন্টার নিয়ে, হাত-পা-চোখ হারিয়ে অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছেন। অসংখ্য নেতা-কর্মীকে চিরদিনের জন্য বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব, অন্ধত্ব। আজও সেই স্মৃতি মনে পড়লে চোখে ঘুম আসে না। সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় আমাকে। আল্লাহ্ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনকে এখনও বাঁচিয়ে রেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল তবিয়তে রেখেছেন। এখনোও জীবন মরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

ছগির হোসেন/এফএ/পিআর

Advertisement