দেশজুড়ে

চিরভাস্বর মুলাদীর সেন্টু

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ২১ আগস্টের বর্বোরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত বরিশালের মুলাদী উপজেলার শহীদ মোস্তাক আহমেদ সেন্টু।

Advertisement

এক যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নেতাকর্মী আর উপজেলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত রয়েছে তার স্মৃতি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু জীবদ্দশায় যেসব নেতাকর্মীদের ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন, সেসব নেতাকর্মীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তাকে।

নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে প্রতি বছর ২১ আগস্ট তার গ্রামের বাড়িতে কোরআনখানি, কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সেন্টুকে স্মরণে রাখায় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোস্তাক আহমেদ সেন্টুর সহধর্মিনী, কন্যাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে শহীদ সেন্টুর মেয়ে আফসান আহমেদ হৃদির নামে ১০ লাখ টাকার ডিপোজিট করে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সেন্টুর পরিবার।

Advertisement

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে মানবপ্রাচীর নির্মাণ করতে গিয়ে গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শহীদ হন মোস্তাক আহম্মেদ সেন্টু। তিনি মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের মরহুম আফসার উদ্দীন আহমেদ হাওলাদারের ছেলে।

নিহত সেন্টুর স্ত্রী আইরিন সুলতানা বেবী জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল তাদের সপ্তম বিয়ে বার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে ২০ আগস্ট বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি তিনি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সেন্টুর এক বন্ধু মোবাইল ফোনে বেবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি স্বামীর প্রাণহীন নিস্পন্দ দেহ দেখতে পান।

নিহত মোস্তাক আহমেদ সেন্টুর একমাত্র কন্যা আফসানা আহমেদ হৃদি জানান, ১৩ বছর আগে বাবা হারানোর কষ্ট না বুঝলেও এখন প্রতিটি মুহূর্তই পিতৃস্নেহের অভাব অনুভব করছেন। বাবার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত আফসান আহমেদ হৃদি বর্তমানের মতিঝিল আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। ২১ আগস্ট এলেই হৃদি ও তার মা আইরিন সুলতানা বেবী কবর জিয়ারত করতে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে।

Advertisement

সেন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানান, যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিচ্ছিলেন, তার পাশেই ছিলেন মোস্তাক আহমেদ সেন্টু। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে প্রিয়নেত্রীকে রক্ষার জন্য সেন্টুসহ অনেকেই মানবঢাল তৈরি করেন। গ্রেনেডের শত শত স্প্লিন্টার সেন্টুর শরীরে বিদ্ধ হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

নাজিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও শহীদ মোস্তাক আহমেদ সেন্টু ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ২১ আগস্ট কোরআনখানি, আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান নীলু।

সাইফ আমীন/এমএআর/এআরএস