খেলাপি ঋণের পাশাপাশি প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে চলতি বছরের জুন শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক।
Advertisement
জানা গেছে, ব্যাংক ব্যবস্থার খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। মোট ঘাটতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের।
খেলাপি ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা জুন’১৭ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর’১৬ শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এসময় ছয় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ৮০ কোটি ১১ লাখ, সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮০৯ কোটি ৩৪ লাখ, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৮০ লাখ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২৬৯ কোটি ৪ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
আলোচিত সময়ে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত) অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
Advertisement
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণগুলো ঠিকমত আদায় হচ্ছে না। ফলে প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। আর এটি বেশি বাড়ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। কারণ তাদের জবাবদিহিতা কম। তাই সরকারের উচিত এসব ব্যাংকগুলোকে সার্পোট না দিয়ে ঋণ আদায়ের ওপর চাপ দেয়ার পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণে কঠোর হওয়া। একই সঙ্গে যেসব বেসরকারি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এসআই/জেএইচ/জেআইএম