বিশেষ প্রতিবেদন

বোরো সংগ্রহ থেকে পিছু হটল সরকার!

চালের বাজার লাগামহীন হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে লক্ষ্য অনুযায়ী বোরো সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সরকারকে নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করছে না মিল মালিক (মিলার) ও কৃষকরা। তাই বোরোতে ধান-চাল সংগ্রহ থেকে পিছু হটতে হয়েছে সরকারকে।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বোরোতে ১৫ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও সোয়া ২ লাখ টনের বেশি আসছে না সরকারের গুদামে। তাই ১২ লাথ ৭৫ হাজার টন ধান-চালই সংগ্রহ করতে পারবে না খাদ্য বিভাগ।

বোরো দেশের সবচেয়ে বড় ফসল। সংকট মোকাবেলায় খাদ্যের মজুদ গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের সংগ্রহের বড় অংশটিও হয় বোরো থেকে। তাই বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারের মজুদ সংকট সহসাই কাটছে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে এবার বোরোতে ধান-চাল সংগ্রহের শেষ সময় ৩১ আগস্ট। চার মাসের মধ্যে সাড়ে তিন মাসে ধানের লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। আর চালের ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে।

Advertisement

গত ১৬ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৭ লাখ টন ধান ও ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি চালের দাম ৩৪ টাকা ও ধানের ২৪ টাকা। গত ২ মে থেকে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়।

কিন্তু এরপরই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪৩-৪৫ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) মো. আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেটুকু সংগ্রহ হয়েছে এরপর আর বোরো সংগ্রহ নিয়ে আমরা ভাবছি না। কারণ হাওরে বোরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো উৎপাদন হয়নি। আমরা চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছি।’ খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ৭ লাখ টনের বিপরীতে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে এক হাজার ৯৬৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার দশমিক ২৫ শতাংশ। আট লাখ টনের বিপরীতে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৫৪ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশের মতো।

খাদ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ১৬ আগস্ট সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন। এরমধ্যে চাল ২ লাখ ৯২ হাজার টন, বাকিটা গম। গত বছর একই সময়ে চালের মজুদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৪৬ হাজার টন।

Advertisement

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে চালের যে দাম সরকার সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেনি বলে বোরো চাল সরবরাহ করতে পারিনি। চুক্তি করায় অনেক মিল মালিককে লস দিয়ে হলেও চাল সরবরাহ করতে হয়েছে। অনেকে বাজার সহনীয় হওয়ার অপেক্ষা করছেন।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা না প্রকাশ না করে বলেন, সরকারের ভান্ডারে এই মুহূর্তে চালের মজুদের পরিমাণ খুবই কম। সরকার মনে করছে, সরকারি আদর্শ মজুদের পরিমাণ ১০ লাখ টন হওয়া উচিত। সে লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সরকারের বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম আমদানি করা হবে।

আরএমএম/জেএইচ/পিআর