বিশেষ প্রতিবেদন

এক ষাঁড়েই লোকসান সাড়ে ৪ লাখ

কুষ্টিয়ার কাজী খামারের মালিক কাজী শওকত। আসছে কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য বহু কষ্টে লালন-পালন করে বেশ কয়েকটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ষাঁড়ের ওজন ৩০ মণ। আশা ছিল ঢাকায় সেগুলো পাঠিয়ে ভালো লাভে বিক্রি করবেন। কিন্তু বিধি বাম! স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। সামান্য একটি দুর্ঘটনায় প্রিয় ষাঁড়টি থেকে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তিনি।

Advertisement

কাজী শওকত জানান, কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য সারা বছর বহু কষ্টে ৩০ মণ ওজনের ষাঁড়টি প্রতিপালন করেন। কয়েকদিন আগে এলাকায় এটির দাম উঠেছিল নয় লাখ টাকা। আরও বেশি দামের আশায় ঢাকায় নেয়ার পথে ট্রাকের মধ্যে পড়ে যায় ষাঁড়টি। এতে তার একটি পা ভেঙে যায়। ফলে এটি আদৌ বিক্রি হবে কি না- তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে আছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় কুষ্টিয়ার কাজী খামারের এই মালিকের। তিনি আরও জানান, মনটা খুবই খারাপ। সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে ট্রাকে করে ওই ষাঁড়সহ ১০টি প্রাণী ঢাকায় পাঠায় বিক্রির জন্য। কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকটির ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে ১৭ ঘণ্টা। এত সময় দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ষাঁড়টি ট্রাকের মধ্যে পড়ে যায়। ভেঙে যায় তার একটি পা।

এখন ষাঁড়টি উঠে দাঁড়াতে পারে না। এ অবস্থায় মাংসের জন্য বিক্রি করলে সাড়ে চার লাখ টাকা আসতে পারে। মোট কথা যে প্রাণীটির দাম নয় লাখ টাকা উঠেছিল সেটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে- আক্ষেপ করে জানান তিনি।

Advertisement

কাজী শওকত এবার কোরবানি ঈদের জন্য ১০০টি গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে চারটির ওজন এক টন (২৭ মণ) করে। তাদের কিভাবে ঢাকায় পাঠাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন তিনি।

রাস্তার যে অবস্থা তাতে ট্রাকে করে গরু পাঠাতে খুব ভয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, রাস্তার মধ্যে টানা ১৭/১৮ ঘণ্টা গরুগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। নদী পথে পাঠাব কিন্তু সেই পথও খুঁজে পাচ্ছি না। প্রতি ঈদের আগে পাইকাররা এসে গরু নিয়ে টানাটানি শুরু করতো। কিন্তু এবার তাদেরও দেখা মিলছে না। স্থানীয় পর্যায়ে দু-একজন যারা আসছেন তারা নামমাত্র মূল্য হাকাচ্ছেন। ওই দামে বিক্রি করলে মূলধনও উঠে আসবে না।

প্রসঙ্গত, দেশে চলমান বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খামারিরা তাদের পোষা প্রাণীর খাদ্য ও থাকার ব্যবস্থা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। নিরুপায় হয়ে অনেকে নামমাত্র মূল্যে পোষা প্রাণীগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন।

কাজী শওকত জানান, তার এলাকার এক খামারি বাধ্য হয়ে দুটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। যার প্রতিটির বাজারমূল্য কমপক্ষে এক লাখ টাকা করে ছিল। অথচ মাত্র ৮০ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করেছেন।

Advertisement

তিনি আরও জানান, বন্যার কারণে বাধ্য হয়েই অনেকে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। এছাড়া বেপারি কম থাকায় গরুর দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

এফএইচএস/এমএআর/বিএ