কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা ও ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমে আসলেও দুর্ভোগ কমছে না বানভাসীদের। রংপুরের ৮ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে ৩৬ হাজার ২০০ হেক্টর রোপা আমনখেত ও ১ হাজার ১১৫ হেক্টর সবজি খেত। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
Advertisement
এছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে সহস্রাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তিস্তা বাঁধের ওপর পরিবারসহ আশ্রয় নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
গত মঙ্গলবার থেকে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ কারণে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে আরো নতুন নতুন পরিবার।
গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া, আলমবিদিতর, লক্ষিটারী, কোলকোন্দ, লোহানী, গজঘন্টাসহ সদর ইউনিয়নের জয়রাম ওঝা, শংকরদহ, চর ইশোরকুল, গান্নারপাড়, গোল্লারপাড়, চর মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, হাজিপাড়াসহ অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
Advertisement
তিস্তাকূলবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বানভাসী আব্দুস সোবহান (৬৫) জানান, গত পাঁচদিনে এক বেলা ভাত খেয়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে চিড়া, মুড়ি খেতে মন চায় না তার। ওই এলাকার এমন অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ও বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ে যে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত না।
তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের কাচনা, শাহপাড়া, হাড়িয়ারকুটি ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী, মামুন পাড়া, সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট, চিলাপাক, আলমপুর ইউনিয়নের মধুরামপুর, তেঁতুলতলা, চাকলা এবং কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম। ওই সব পানিবন্দি দুস্থ ও অসহায় মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
কাশিয়াবাড়ী এলাকার পানিবন্দি আজিজার রহমান, রিমু বালা, জয়ন্তী বালা, অতুল চন্দ্র জানান, গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় তারা ঘরে বসে আছেন। হাতে কাজকর্ম না থাকায় ঘরে কোনো খাবার ছিল না। এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪৪ হাজার ৫০৫টি। এসব পরিবারেরর মোট সদস্য প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার ৫২৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সরকারিভাবে জেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৬০ টন চাল ও ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় জরুরি চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও এখনো তা মেলেনি।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচারক স ম আশরাফ আলী বলেন, রংপুর জেলায় ৩৬ হাজার ২০০ হেক্টর রোপা আমনখেত ও ১ হাজার ১১৫ হেক্টর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম