সিরাজগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
Advertisement
এতে করে প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। জেলার ৫টি উপজেলার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। এরসঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওষুধ ও তীব্র গবাদি পশুর খাদ্যের তীব্র সংকট।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুর্গত মানুষজন গবাদি পশু ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ওয়াপদা বাঁধে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন দূরের কোনো আত্মীয়ের বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে।
কিন্তু বন্যা থেকে কোনোমতে নিজেরা খেয়ে না খেয়ে বাঁচলেও গবাদি পশুর আশ্রয় ও খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বন্যার্তরা। এই সুযোগে বেড়ে গেছে খড়, খৈল, ভুষিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম।
Advertisement
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সামনে কোরবানির ঈদ। তাদের খাবার দিয়ে বাঁচানোর আগে গবাদি পশুগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করা হোক।
এদিকে, বাঁধে অবস্থান নিয়ে, কোনোমতে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করলেও; চরম খাদ্য সংকট ও পানীয় জলের অভাবে পড়েছেন বন্যার্তরা। সেইসঙ্গে শুকনো জ্বালানির অভাবে গৃহিণীরা পড়েছেন বিপাকে। খোলা আকাশের নিচে খড়কুটো দিয়ে কোনোমতে রান্না-বান্না সারতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে, বন্যার প্রকোপে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নানান পানিবাহিত রোগ ও উপসর্গ। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সেবা পাচ্ছেন না বর্ন্যাতরা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
Advertisement
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা পয়েন্টে যমুনার পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৪৮টি ইউনিয়নের ৩ শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
শুভগাছা টুটুলের মোড় এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাদের বসতবাড়ি একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা পানি। কোনো জিনিসপত্র বের করে আনতে পারেননি। বাধ্য হয়ে কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
ওই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ সকিতন ভেওয়া, শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুস জানান, বন্যায় ঘরবারি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার ধারে পলিথিন টাঙিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন। তবে বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্না হচ্ছে না, খাদ্য সংকট থাকায় অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ওষুধ সংকটে ভুগছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ মানুষই পাউবোর বাঁধ, উচুঁ রাস্তাঘাট ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং এক হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই প্যাকেট ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এসআর/পিআর