দেশজুড়ে

সব এলোমেলো করে নামছে পানি

লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা থেকেই বন্যার পানি ধীরে-ধীরে সরে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার রেখে যাওয়া ভয়াল চিত্র। তছনছ হয়ে পড়ে আছে ঘরবাড়ি। তিস্তা ও ধরলার পানি কমতে শুরু করলেও লোকজনের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। রাস্তা ঘাটের বেহাল দশায় বেড়েই চলেছে ভোগান্তি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন পরিবারগুলো। তবে আবারও বন্যায় আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

Advertisement

এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় লালমনরিহাটের দুইটি উপজলোর ৩২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়কি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ১৪৮টি ও হাতীবান্ধা উপজলোয় ১৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সাময়কি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বিদ্যালয়গুলোতে।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়কি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে সত্যাতা নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বানভাসী মানুষগুলোর অবর্ণনীয় কষ্টগাঁথা। তারপরও রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। হাতীবান্ধার মধ্য গড্ডিমারী ‘তালেব মোড়’ নামের একটি বাজার। বন্যায় সেই তালেবের পাকা দোকানটিও ভেঙে তছনছ হয়ে পড়ে আছে।

Advertisement

সেখান থেকে সামান্য কিছুটা এগিয়ে এলেই চোখে পড়ে বিশাল একটি ভাঙা অংশ। মাথায় দাঁড়িয়ে খায়রুন নেছা (৩৫) একবুক কষ্ট নিয়ে জানালেন, রোববার রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটা সড়কটি ভেঙে নিমিষেই বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। জীবন বাঁচাতে পাশের একটি সড়কে উঠে আশ্রয় নেন। পরদিন সকালে দেখেন বাড়িটি পানিতে ভেসে গেছে।

সরকারি সহায়তা বলতে ত্রাণের চাল ছাড়া আর কিছুই জোটেনি খায়রুন নেছার কপালে। অনেকের ঠাঁই হয়েছে সড়কের উপরে বা অন্য কোনো উঁচু জায়গায়।

জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ধবলগুড়ির একমাত্র পাকা সড়কটি বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার মানুষ চলাচলের ভোগান্তীতে পড়ছেন। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী সঙ্গে একমাত্র সংযোগ সড়কটিতে ৬ জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় গড্ডিমারী এলাকার বানভাসী মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

অপরদিকে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত লোকজনের জন্য ২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ শতাধিক লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের নিজ-নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যায় সম্পূর্ণভাবে ২৫০টি পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৬৫০টি। এই ইউনিয়নটির লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও সলেডি স্পার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

Advertisement

আদিতমারী উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর লোকজন কাজ করে যাচ্ছেন। তারা আদিতমারী ডাকবাংলোয় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মেডিকেল টিমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, জেলায় ত্রাণ তৎপরতার অব্যাহত আছে। সেনাবাহিনীর লোকজন অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মেডিকেল টিমসহ বন্যার্ত পরিবার গুলোকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।

রবিউল হাসান/এফএ/আরআইপি