আন্তর্জাতিক

ইরানের হজে ফেরা দ্বন্দ্ব কমাবে সৌদির সঙ্গে

গত দুই বছরের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো হজে অংশ নিচ্ছেন ইরানিরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ উদ্যোগ মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দুই দেশ সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে সহায়ক হবে।

Advertisement

২০১৫ সালে হজের সময়ে মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের মধ্যে ইরানের ৪৬৫ নাগরিক নিহত হয়। এতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অদূরদর্শিতা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে পরের বছর হজ বর্জন করে ইরান। খবর- আল-মনিটরের।

২০১৬ সালের শুরুতে সৌদি সরকার নেতৃস্থানীয় এক শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলে, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ইরানি জনতা তেহরানে সৌদি আরব দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার জের ধরে সৌদি ইরানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

এদিকে, চলতি বছরের জুনের শুরুতে সন্ত্রাসবাদে সহায়তা ও অর্থায়নের অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও অবরোধ আরোপ করে সৌদি এবং তার মিত্র বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর।

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের জের ধরে সম্প্রতি সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানকে সন্ত্রাসের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অভিহিত করেন। সৌদি-ইরানের এই টানাপোড়েনের মধ্যেও গত ১ আগস্ট ইস্তানবুলে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের শীর্ষ বৈঠকে উষ্ণ সাক্ষাৎ হয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে।

দুই দেশের দ্বন্দ্বের মধ্যেও ইরানের গণমাধ্যমের প্রত্যাশা দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তরিক করমর্দন ও ইরানের হজে প্রত্যাবর্তন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবে।

এরআগে হজে অংশগ্রহণ নিয়ে গত ৩০ জুলাই ইরানি কর্তৃপক্ষ দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর সঙ্গে বৈঠকে বসে। সেখানে হজে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও তা এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ইরানের ওই ইতিবাচক মনোভাবের বিপরীতে সৌদি কর্তৃপক্ষ চলতি বছর হজে অংশগ্রহণের জন্য ৮৬ হাজার ইরানিকে ভিসা দেয়। গত ২০১৫ সালে হজে আসতে ভিসা পেয়েছিলেন মাত্র ৬২ হাজার ইরানি। সে তুলনায় এবার প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি ইরানি হজ করছেন। এতে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের আশাবাদী করে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের।

Advertisement

এদিকে, গত বছর তেহরান-রিয়াদ সম্পর্কচ্ছেদের পর থেকে সৌদিতে ইরানের হজ অফিস বন্ধ ছিল। তবে চলতি আগস্টে তা আবার সচল হয়েছে। এমনকি, হজযাত্রীদের সহায়তায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১০ কর্মকর্তা সৌদি রয়েছেন। রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও হজ নিয়ে দুই পক্ষের মতৈক্য তাই নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

হজের মাধ্যমে সৌদি আরব ইরানের প্রতি তার দ্বন্দ্বমূলক মনোভাবের পরিবর্তন করছে বলে মনে করেন তেহরানভিত্তিক গবেষক কামরান কারিমি। তিনি আল-মনিটরকে বলেন, ইরানিদের হজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। উভয় দেশই চেষ্টা করেছে হজকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সঙ্গে দূরত্ব ঘোঁচাতে আগ্রহী সৌদি। এজন্য তারা মধ্যস্ততাকারী খুঁজছে। গত ১৩ আগস্ট ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিম আল-আরাজী বলেন, ইরান-সৌদি বিরোধ মেটাতে মধ্যস্ততা করতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে দুই দেশের বিরোধ মেটাতে মধ্যস্ততার উদ্যোগ এটাই প্রথম নয়। এরআগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে তৎকালীন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট) এ বিরোধ নিরসনে উদ্যোগী হন। এরপর একই বছরের নভেম্বরে ওমান, ২০১৬ সালের জানুয়ারি প্রথমে ইন্দোনেশিয়া ও পরে তুরস্ক রিয়াদ-তেহরান সম্পর্ক জোড়া দিতে আগ্রহ দেখায়।

জর্দানের সাবেক সৌদি রাষ্ট্রদূত নসরতুল্লাহ তাজিক এ প্রসঙ্গে বলেন, সিরিয়া ও ইয়েমেন পরিস্থিতি সাপেক্ষে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা চান সৌদি যুবরাজ সালমান। এ লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শক্তি ইরানের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে আগ্রহী তিনি।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে শিয়া ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে বিরোধ এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধি করবে। কারণ ইরাকের প্রয়াত নেতা সাদ্দাম হোসেন যুগ শেষেও ইরাকে ইরানের বেশ প্রভাব রয়েছে। বিশেষত, শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদরের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ পরিস্থিতি ইরাক তথা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবে ভারসাম্য আনতে আগ্রহী সৌদি আরব।

এসআর/আরআইপি