আইন-আদালত

বড় হয়ে শিশু ফাতেমা হবে ব্যারিস্টার

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া শিশু ফাতেমা বড় হয়ে ব্যারিস্টার হবে। তাকে সেভাবেই গড়ে তোলা হবে। এমনই আশা প্রকাশ করেছেন শিশুটির সদ্য বৈধ অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পাওয়া আইনজীবী সেলিনা আক্তার।

Advertisement

বুধবার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান শিশু ফাতেমার ‘বৈধ অভিভাবকত্বের’ জন্য আইনজীবী সেলিনা আক্তারকে নির্ধারণ করেন। তার স্বামী ব্যবসায়ী আলমগীর।

একই সঙ্গে আদালত ২২ আগস্ট তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে শিশুটিকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এছাড়া শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এ দম্পতিকে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিড) করারও নির্দেশ দেন আদালত।

আইনজীবী সেলিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশু ফাতেমাকে আমি ব্যারিস্টার বানাব। তাকে আমি মানুষের মতো মানুষ করব। তার জন্য আমি সবই করব। আমার নিজের সন্তান নেই। সে-ই আমার সন্তান। আমার সন্তান থাকলে তাকে যেভাবে মানুষ করতাম ঠিক তেমনি ফাতেমাকে মানুষ করব। তার কোনো বিষয়ে কমতি রাখব না।’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ৯ আগস্ট ছোট্ট শিশু ফাতেমার ‘বৈধ অভিভাবকত্ব’ নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও বিচারক অসুস্থ থাকায় তা পিছিয়ে আজ বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছিল। আজ আবেদনকারী নয় দম্পতি থেকে শিশুটির বাবা-মা বাছাই করা হলো।

এর আগে শিশু ফাতেমার প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আদালতের নির্দেশে বিমানবন্দরের ওইদিনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এতে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শিশুটির বাবা-মা দাবি করে কেউ লিগ্যাল নোটিশও দেয়নি। এছাড়া শিশুটি হারিয়ে গেছে মর্মে বিমানবন্দর থানায় কেউ জিডিও করেনি।

গত ২৫ জুলাই ফাতেমার প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। সেদিন তিনি ৯ আগস্টের মধ্যে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার দিন নির্ধারণ করেন। প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে শিশুটিকে নিতে আগ্রহী কোনো দম্পতিকে বাছাই করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

Advertisement

ওইদিন শিশুটিকে নিতে আদালতে আবেদন করেন নয় দম্পতি। তাদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাও রয়েছেন।

আবেদনকারী দম্পতিরা হলেন- ব্যবসায়ী আশিক ওয়াহিদ-শাহনাজ, পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ-নিঝুম আক্তার, সেনাবাহিনীর তথ্যপ্রযুক্তি ফার্মের কর্মকর্তা মাজহারুল-লায়লা নূর, ব্যবসায়ী আলমগীর-অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার, ব্যবসায়ী জামাল-শ্যামলী আক্তার, ব্যবসায়ী গোলাম সরওয়ার-দুলশাদ বেগম বিথি, ব্যবসায়ী শামসুল আলম চৌধুরী-শামিমা আক্তার চৌধুরী, বিমানের কর্মকর্তা আ ক ম আতিকুর রহমান-মোনালিসা দম্পতি ও সরকারি চাকরিজীবী মেহেদি হাসান।

গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফিরছিলেন জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম। একই বিমানে শিশুটিকে নিয়ে তার মাও ফিরছিলেন। স্বপ্না জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় ওই নারীও একই কাজে সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন স্বপ্না।

স্বপ্না বিমানবন্দর পুলিশকে জানান, ওই নারীও জর্ডান থেকে একই ফ্লাইটে ফেরেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হয়ে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না। এসময় বিমানে পরিচয় হওয়া শিশুটির মা তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি। আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন স্বপ্না। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সেই নারী আর ফেরেননি।

পরে স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের কাছে ঘটনাটি জানালে তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠায়। ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।

জেএ/জেডএ/আরআইপি