আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। এছাড়া কেউ কেউ সেনাবাহিনী নিয়োগের ওপর জোর দিলেও অনেকে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
Advertisement
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ মতামত দেন। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আজকের সংলাপে ৩৪ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন।
সচিব বলেন, ‘সেনা মোতায়েনের পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন তারা। কেউ বলেছেন সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই, কেউ বলেছেন মোতায়েন করলে ভালো হয়। এ ধরনের মতামত এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘না’ ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন তারা। কেউ ভালো বলেছেন, কেউ কেউ ‘না’ ভোটের বিপক্ষে বলেছেন। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। কারণ পর্যবেক্ষকদের নামে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বিভিন্ন রকমের সমস্যার সৃষ্টি করেন।
Advertisement
হেলালুদ্দীন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে অথবা তারা যেন অন্য কোনো দলে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেইভাবে আইনি কাঠামো তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন সাংবাদিকরা।’
নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, আমাদের অতিথিরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন। যদি সম্ভব হয় এটি বাংলায় তরজমা করার পরামর্শ দিয়েছেন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমান পুনঃনির্ধারণীর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। ভোটের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তারা। নির্যাতন বন্ধ করার জন্যও পরামর্শ দেন তারা। তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে আচরণবিধিটা করা হবে সেটা যেন প্রার্থীরা কঠোরভাবে পালন করে সেই বিষয়ও অনুরোধ করেছেন। আরেকটি প্রস্তাব আসছে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ার ব্যাপারে। কীভাবে তাদের ভোটার করা যায়, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
সচিব বলেন, নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, ধর্মকে কোনো ভাবেই যাতে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে, অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ, প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হওয়া, কাউকে যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয় সেজন্য নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি, অনলাইনে মনোনয়ন নেয়ার সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি, প্রায় অর্ধেকই নারী ভোটার হওয়ায় তাদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নেয়ার জন্য বলেছেন সাংবাদিকরা।
Advertisement
সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশের মতামত হল যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সেনাবাহিনী। নির্বাচন কমিশন সবার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহাদৎ হোসেন।
সংলাপে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নূরুল কবীর, সাইফুল আলম, মোস্তফা কামাল, মতিউর রহমান চৌধুরী, খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নাঈমুল ইসলাম খান, আনিস আলমগীর, মো. শফিকুর রহমান, সামশুল হক, ওমর ফারুক, মো. আবদুল্লাহ, মাহফুজউল্লাহ, কাজী সিরাজ, আনিসুল হক, গোলাম মর্তুজা, বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সোহরাব হাসান, কাজী রোকনুদ্দীন আহমদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল বৃহস্পতিবারও সকাল ১০টা থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। এদিন টেলিভিশন, অনলাইন ও রেডিও’র আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মতামত নেয়া হবে।
এইচএস/জেএইচ/আরআইপি