যে কোনো সংকট মোকাবেলায় পূর্ব-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সরকার ১৫ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন গম আমদানি করবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
Advertisement
বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘সভায় সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার অকাল বন্যার কারণে হাওরাঞ্চলে ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার আমাদের এক কোটি ৯১ লাখ বোরো ফসল উৎপাদনের যে টার্গেট ছিল, বিভিন্ন কারণে সেই টার্গেট পরিপূর্ণ করতে পারিনি। বোরোতে ৮ লাখ টন চাল ও ৭ লাখ টন ধান সংগ্রহের যে টার্গেট ছিল, সেটাও সংগ্রহ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমরা সংগ্রহ করতে পারব না, পারছি না। এ পর্যন্ত বোরো ফসল ঘরে এসেছে ২ লাখ ৬ হাজার টন, আরও কিছু আসবে। আশা করছি, ২ লাখ ৭০ হাজার টন বোরো ফসল আমরা সংগ্রহ করতে পারব।
Advertisement
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে বন্যা আসছে, তাতে বিপদের অবস্থাই। সব মিলিয়ে আমরা এই অর্থবছর ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
‘একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার মানে এই নয় যে আমরা খাদ্য সংকটে আছি। কোনো রকম খাদ্য সংকট নেই। গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। বাজারেও পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য আছে।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কেবলমাত্র প্রিকশান (পূর্ব-সতর্কতা) নেয়ার জন্য, সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য কোনো রকম সমস্যায় যাতে না পড়তে হয়, এজন্য এ চাল ও গম আমদানি করছি।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল চুক্তি করেছিলাম, ম্যাক্সিমাম চাল চলে এসেছে। এই মাসের মধ্যে বাকি চাল চলে আসবে। এটা ১৫ লাখ টনের মধ্যে।’
Advertisement
‘কম্বোডিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে আড়াই লাখ টন চালের। সেই চাল আনার চুক্তিপত্র প্রক্রিয়াধীন। এখন এ সংক্রান্ত প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের জন্য যাবে। পারচেজ কমিটি পাস করলে এলসি খোলার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা সেই চালটা দেবে।’
চলতি অর্থবছরে যে ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে, কি পরিমাণ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আড়াই লাখ টন আমাদের সমুদ্রসীমায় চলে এসেছে।’
সরকার টেন্ডারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ টন চাল কিনছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। টেন্ডারের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন চাল কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমাদের কোনো রকম সমস্যার কারণ নেই। কোনো কিছুতেই সমস্যা হবে না। খাদ্যের মজুদের পরিমাণ অত্যন্ত ভালো। দেশে কোনো রকম সংকটের প্রশ্নই উঠে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো জায়গায় বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে আমাদের কার্পণ্য নেই। হাওর অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে, বন্যা দুর্গত অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে। সব ধরনের বিতরণ চলমান আছে।’
তিনি বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারকে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সেপ্টেম্বর থেকে সেই কর্মসূচি চালু হবে। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আগামী ৩ মাস এই কর্মসূচি চলবে।’
খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেএইচ/জেআইএম