দেশজুড়ে

যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি দিনদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ওষুধ সংকটে ভুগছেন তারা।

Advertisement

সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। এছাড়াও জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা পয়েন্টে যমুনার পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৪৮টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত ৫টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় তিনশ গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ মানুষই পাউবোর বাঁধ, উঁচু রাস্তাঘাট ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং এক হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুর্নবাসন দফতর থেকে এ পর্যন্ত ১শ ৭৫ মে.টন চাল ও নগদ প্রায় ৮ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলার সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসক ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের। পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আরশেদ আলী জানান, পাঁচ উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর কৃষিজমি এরই মধ্যে বন্যায় ডুবে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্রামের ফসলি জমি ডুবে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতের আসামে বন্যা হওয়ার কারণে যমুনার পানি আরো ২/১ দিন বাড়তে পারে। যমুনার তীব্র স্রোতের কারণে জেলার ৭৮ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৮/১০ কিলোমিটার এলাকা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলার বাহুকায় বিকল্প বাঁধটি গত বন্যায় ভেসে গিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকেছিল, সেটি জিওটেক ও সিনথেটিক বস্তায় বালি ভরে উচ্চতা আরো বাড়ানো হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা পাউবোর লোকজনকে সহায়তা প্রদানের জন্য সোমবার সিরাজগঞ্জ পরিদর্শন করেছেন। তারা আবারও পাউবোকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/এমএস