জাতীয়

নিমতলী ট্র্যাজেডি : বন্ধ হয়নি রাসায়নিক ব্যবসা

ধুমধাম করে চলছিল বিয়ের আয়োজন। বিউটি পার্লারে চলছিল কনের সাজানোর কাজ। সন্ধ্যা নামতেই বর পক্ষ চলে আসে কনের বাড়ি। কিন্তু হঠাৎ আগুনের কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। আগুনে পুড়ে যায় নিমতলী অধিকাংশ বাড়ি। পুড়ে মারা যায় ১২৪ তাজা প্রাণ। বিয়ের অনুষ্ঠানেই অতিথিসহ মারা যান ৪১ জন। আজ সেই নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবস। ২০১০ সালের এই দিনে নিমতলী এলাকার একটি বাড়ির নিচতলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কেমিক্যাল গোডাউন থেকে মূলত: ছিল আগুনের সূত্রপাত। মর্মান্তিক ঐ ঘটনার পর শুরু হয় পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড আর সরকারের দৌড়ঝাঁপ। তদন্তও শুরু হয়। তোড়জোড় শুরু হয় নিমতলীসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেয়ার। এর পর পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বছর। কিন্তু কথা রাখে নি কর্তৃপক্ষ। নিমতলী এলাকা থেকে কেমিক্যালের সব ধরণের কারখানা ও বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।নিমতলীসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে এখনও রয়ে গেছে কেমিক্যাল গোডাউন। অলিগলিতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে কেমিক্যাল, কখনও বৈধ আবার কখনও অবৈধ উপায়ে। ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য বিসিকের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে আরেকটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কমিটিগুলো এখনও কাজই শুরু করতে পারেনি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা গেছে সেই পুরনো চিত্র। রাস্তার ওপর কেমিক্যালের ড্রাম রাখার কারণে চলাচল করা দায়। আগের মতই বিভিন্ন বসতবাড়ির নিচ তলায় গড়ে উঠেছে কেমিক্যালের গুদাম। ঠেলাগাড়ি, ভ্যানে করে নেয়া হচ্ছে বিপজ্জনক কেমিক্যালের ড্রাম। সামান্য আগুনেই ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। পরিস্থিতি বিপজ্জনক সত্ত্বেও ভ্রূক্ষেপ নেই প্রশাসনের। পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে নি প্রশাসন।নিমতলী ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুর শিল্প এলাকার একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে আটজন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। ছোট-খাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তো ঘটছেই।ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন বলেও আর দায়িত্ব এড়ানো যাবে না।পুরান ঢাকার নবাব কাটারার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দিনটিকে জাতীয়ভাবে ‘নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মীসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা। মানববন্ধন ও সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে তারা। অগ্নিকাণ্ডের দিনটি সামনে রেখে সিটিজেনস রাইটস মুভমেন্ট ও গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশসহ (জিসিবি) ছয়টি সংগঠন এ মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচির আয়োজন করে। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো স্থানান্তর না হওয়া দুঃখজনক। তিনি অবিলম্বে অনাবাসিক এলাকায় বিকল্প রাসায়নিক পল্লী স্থাপনের দাবি জানান। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিভেদে ‘লাল’ ও ‘হলুদ’ সতর্কসংকেত ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। সিটিজেনস রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান বলেন, দুর্ঘটনায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটলেও তাদের স্বজনদের এখনো পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মারা যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। জেইউ/এএইচ/এমএস

Advertisement