অস্ট্রেলিয়ার আসার সময় ঘনিয়ে এল। আর মাত্র দুদিন পরই রাজধানীতে এসে পৌঁছাবে স্টিভেন স্মিথের দল। দু’দিন প্র্যাকটিসের পর প্রথম টেস্টে মাঠে নামার আগে একটি দুই দিনের প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার কথা অসিদের। সেই ম্যাচ নিয়েই বিপত্তি। নানা কথা। কোথায় হবে প্র্যাকটিস ম্যাচ? ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে, বিকেএসপিতে নাকি ইউল্যাব মাঠে? তা নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। বোর্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিসিবির দায়িত্বশীল একজন শীর্ষ কর্তা বা মুখপাত্র এখন পর্যন্ত বলতে পারেননি, ‘অমুক ভেন্যুতে খেলা হবে।’
Advertisement
তাদের মুখে সেই শুরু থেকে ঘুরেফিরে গোটা চারেক ভেন্যুর নাম উচ্চারিত হয়েছে। ফতুল্লা, বিকেএসপি, সিলেট স্টেডিয়াম ও ইউল্যাব মাঠ। সময়ের প্রবাহতায় সিলেট স্টেডিয়াম ও বিকেএসপি বাদ পড়েছে।
অজিরা প্রথম টেস্টের আগে বিমান ভ্রমণকে ঝক্কি ভেবে আগে ভাগেই সিলেটে খেলার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার মাত্র দূর হলেও প্রতিদিন ২ ঘণ্টা+২ ঘণ্টা (যাওয়া আসা মিলে) = ৪ ঘণ্টা বাস ভ্রমণের কথা ভেবে বিকেএসপিতে না খেলার কথাও জানিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্ট।
Advertisement
এতে করে বিসিবি পড়ে গেছে বিপাকে। বাধ্য হয়েই সিলেট ও বিকেএসপিতে খেলা আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরে আসতে হয়েছে। এখন হাতে বিকল্প মোটে দুটি। এক ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। না হয়, রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর ইউল্যাব মাঠ।
মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে একটু ভেতরে বেরি বাঁধ পাড় হয়ে ইউল্যাব মাঠ। যেখানে কখনই কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি। প্রথম শ্রেণির খেলাও হয়নি। এমন একটি অখ্যাত ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়ার মতো পুরো দস্তুর টেস্ট দল দুই দিনের ম্যাচ খেলতে রাজি হবে- সে সম্ভাবনাও কম।
তাই বিসিবি ফতুল্লায় খেলা আয়োজনের প্রাণপণ চেষ্টা করছে। এখানেও আছে বাধা বিপত্তি। সবার জানা অতি বৃষ্টির কারণে বৃষ্টির পানি, স্যোয়ারেজের পানি, গার্মেন্টস ও ডাইং কারখানার পানি মিলে ফতুল্লা স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকা সয়লাব।
মূল প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে আউটার স্টেডিয়াম এবং স্টেডিয়ামের মূল গেট থেকে মাঠে ঢোকার পথ মিলে প্রায় ৩০০ গজ এলাকা পচা পানির নিচে। ওই জমে থাকা পানি মূল ভেন্যু তথা পিচের কোনোই ক্ষতি করতে পারেনি।
Advertisement
আউটার স্টেডিয়াম ও আশপাশে জমে থাকা পানি মাঠের মাঝখানের উইকেট পর্যন্ত যায়নি বা যেতে পারেনি। তাই ফতুল্লার উইকেট শতভাগ অক্ষত ও খেলা উপযোগী আছে। এখানে যখন তখন খেলা চালানো সম্ভব। আউট ফিল্ডেরও যে খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে, তা নয়। ৪০ গজ সম্পূর্ণ শুকনো আছে। সেখানেও পানি যেতে পারেনি।
সমস্যাসঙ্কুল জায়গা হলো সীমানার দড়ি থেকে ৪০ গজের বাইরের ২০/২৫ এলাকা। এখানেই বাইরের সেই পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ঢুকেছিল। জায়গায় জায়গায় জমেও ছিল। তাতে আউটফিল্ড যে একদম খেলা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, তাও নয়।
মাঠের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে পানি জমে থাকায় জায়গায় ঘাস গেছে মরে। মাটিও নরমও হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনের বৃষ্টিতে ওই নরম জায়গা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেটাই আসলে এখন মূল অন্তরায়। এদিকে অনেক কারণেই ইউল্যাবের চেয়ে পুরোদস্তুর টেস্ট ভেন্যু ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনে যত তোড়জোড় চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই মাঠকে খেলা উপযোগী করে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিসিবি। আজ পড়ন্ত বিকেলে বিসিবির এক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার ঠিক আগে যে অবস্থা ছিল, এমনটা আর ক’দিন থাকলে এই মাঠে ২২-২৩ আগস্ট প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন সম্ভব।
এখন চিন্তা ও বাঁধা একটাই- বৃষ্টি। ভারি বর্ষণ কিংবা টানা বা অবিরাম বৃষ্টি হলে আউটফিল্ডের ক্ষতস্থানগুলোকে খেলা উপযোগী করে তোলা কঠিন হবে। বেশি বৃষ্টি হলে হয়তো আবার পানিও জমে যেতে পারে। তাই যদি আগামী ১৬ আগস্ট বুধবার থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত তেমন ভারি বৃষ্টি বা অবিরাম বর্ষণ না হয়, তাহলে ফতুল্লার আউটফিল্ড সম্পূর্ণ খেলা উপযোগী করে তোলা সম্ভব। কিন্তু বৃষ্টি হলে বা বৃষ্টি পড়তে থাকলেই যত বিপত্তি ঘটবে।
এআরবি/এনইউ/এমএস