সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ঘুরতেই মসজিদের গেটে মঙ্গলবার দুপুরে ভিক্ষার থালা সামনে নিয়ে বসেছিলেন আনুমানিক ৫৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। লুঙ্গি পরিহিত উদাম গায়ের এ বৃদ্ধের সারা শরীরে ছোট-বড় অজস্র টিউমার।
Advertisement
টিউমারের সংখ্যার আধিক্যের কারণে খুব ভালো করে খেয়াল না করলে মাথার চুল ও মুখের কাঁচাপাকা দাঁড়িও দেখা যায় না। হঠাৎ দেখলে ইংরেজি ছবিতে দেখানো রোবট টাইপের মানুষ বলে ভ্রম হতে পারে।
মঙ্গলবার নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি। এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম তারপরও পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই থমকে দাঁড়িয়ে লোকটিকে দেখে হেঁটে যাচ্ছিলেন আবার কেউবা পাঁচ-দশ টাকা ভিক্ষা দিচ্ছিলেন।
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক তার নাম-পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি জানান, তার নাম আবু হানিফ। বয়স ৬৪ বছর। ময়মনসিংহের ধোপাপাড়া তার গ্রামের বাড়ি। এক সময় আর দশজন মানুষের মতো তিনি সুস্থ সবল ছিলেন। ২০-২২ বছর বয়সে বিয়ের কাজটিও সেরে ফেলেছিলেন।
Advertisement
আবু হানিফ জানান, চার দশকের বেশি সময় আগে হঠাৎ তার ডান হাতে ঘামাচির মতো দু-তিনটি ফোঁড়া দেখা দেয়। প্রথমে সাধারণ ফোঁড়া ভেবে কোন চিকিৎসকের কাছে যাননি। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে ফোঁড়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে সারা শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় তার বাবা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এগুলো টিউমার বলে চিহ্নিত করেন। চিকিৎসা হিসেবে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে এগুলো কোনদিনও ভালো হবে না বলে বিদায় দেন। এরপর থেকে আবু হানিফ আর কখনও টিউমারের চিকিৎসার জন্য কোনো চিকিৎসকের কাছে যাননি।
গত চার দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে, এখনকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ৪০ বছরের আগের চেয়ে অনেক উন্নত ইত্যাদি জানিয়ে কেন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ অসুখ আর ভালো হবে না। এ কারণে তিনি আর ডাক্তারের কাছে যাননি।’
সারা শরীরে অজস্র টিউমারে কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুর দিকে আয়নায় নিজেকে দেখলে নিজেই ভয় পেতাম। বহুদিন কান্নাকাটিও করেছেন। কিন্তু এখন স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, অভিশপ্ত টিউমারের কারণেই তার আয় রোজগার ভালো হচ্ছে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে বেঁচে আছেন।
পরিবার পরিজন ঢাকায় থাকে কিনা জানতে চাইলে তিনি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিয়ে জানান, তিনি নিউমার্কেটের অদূরে আইয়ুব আলী কলোনিতে একা থাকেন। চলে আসার সময় সুচিকিৎসা চান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ অসুখ আর ভালো হবে না। যে কয়টা দিন বাঁচব এগুলো নিয়ে বাঁচব।’ তাই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন তিনি।
Advertisement
এমইউ/ওআর/এমএস