যমুনা নদীর পানি জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে যমুনার পানি চিলমারী পয়েন্টেও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
Advertisement
উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে এবং দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বন্যা বিস্তৃতি লাভ করতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (১৪ আগস্ট) মতিঝিলের পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রেস ব্রিফিংয়ে সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাইফুল হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের নদীবাহিত বন্যায় যে পানি আসে তা ৯০ থেকে ৯৩ ভাগ পানি আসে দেশের উজানের অঞ্চল থেকে। উজান অঞ্চল থেকে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা দিয়ে পানি বাংলাদেশে আসে।’
Advertisement
সাইফুল হোসেন বলেন, ‘বড় বন্যা হওয়ার জন্য যেসব ব্যাপ্তি...সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনটি অববাহিকার পানি একই সময়ে বাড়ছে। নদীর পানি বেড়ে ইতোমধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, হবিগঞ্জ সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজকে (সোমবার) পর্যন্ত সেখানে পানি বাড়ছে।’
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বন্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে রেকর্ডেড হাইয়েস্ট হয়েছে। আমাদের কাছে গত ৬০ বছরের তথ্য-উপাত্তে যে সর্বোচ্চ লেভেল আছে এবার তা ছাড়িয়ে গেছে। যমুনার পানি চিলমারী পয়েন্টেও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করবে। যমুনার পানি বৃদ্ধি গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে বন্যার সৃষ্টি করেছে।’
‘ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাংলাদেশ অংশে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধির হার গড়ে ৪৭ সেমি.। ফলে নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সোমবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৩, ১১৮, ৯০ এবং ৯৬ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় এই নদীর পানি ৪০ হতে ৪৫ সেমি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তৃতীয় দিনে গিয়ে পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে পানি কমতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। তবে মাঝের এ সময়ে বন্যা টাঙ্গাইল হয়ে মানিকগঞ্জের দিক হয়ে মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের দিকে যেতে পারে’-জানান তিনি।’
গঙ্গা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার বেশ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে সাইফুল হোসেন বলেন, ‘মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চারদিকের পাঁচটি নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ থেকে ১৫০ সেমি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভবনা নেই।’
Advertisement
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার অববাহিকার নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বর্তমানে বিপদসীমার এক দশমিক ২৫ থেকে এক দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অববাহিকার উজানে নেপালে ও বিহারে বন্যা থাকার ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।’
মেঘনা অববাহিকায় সুরমা ও কুশিয়ারার বন্যার পরিস্থিতি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অবনতিশীল থাকতে পারে। এরপর পানি কমে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
‘ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে যদি গঙ্গা ও মেঘনার পানি যোগ হয় তবে কিন্তু বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেটা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে, ১৯৯৮ সালে। এবারের বন্যাটাকে বলছি ২০১৭ সালের বন্যা- এবারের বন্যার আচরণ ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা থেকে ভিন্ন। এটার সঙ্গে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যার তুলনার সময় এখনও আসেনি।’
সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সতর্ক থাকার জন্য এবং এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণেরও অনুরোধ জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘এবছর বন্যার শুরু থেকেই একটু অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। খুব সাধারণভাবে এপ্রিল ও মে মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি আকস্মিক বন্যা হয়। কিন্তু এটার শুরু হয়েছে মার্চ মাসের শুরু থেকে। শেষ হয়ে গেছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। যখন আসার কথা না তখনই এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, এই আকস্মিক বন্যার ব্যাপ্তির মাত্রাটা ছিল স্মরণকালের সবেচেয়ে বেশি। এ বন্যা হাওরের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘মার্চ মাসে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, এটা সাধারণত হয় না। আবার জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত একটা বন্যা হলো, ইম্যাচিউটড স্টেজে ওই বন্যাটা হওয়ায় এর ব্যাপ্তি সারাদেশে ছাড়ায়নি, শুধু উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় সীমাবদ্ধ ছিল। এটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ৫-৬ দিন থেকে নতুন করে একটি বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমরা বন্যাকালের পূর্ণ যৌবনে আছি।’
আরএমএম/এসআর/আইআই