সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছিল নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন এই ধুম্রজাল কাটেনি ২১ বছরেও। যদিও আইনি প্রক্রিয়া বলছে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন! কিন্তু সালমান শাহের পরিবার ও সালমান ভক্তদের দাবি, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর।
Advertisement
এই পরিকল্পিত হত্যার জন্য সালমানের পরিবার থেকে দায়ী করা হয়েছে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরাকে। এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাদের ছাড়া সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে নিরবতা ভেঙ্গে জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগকে সামিরা বলেছেন, ‘ইমনকে (সালমান শাহ) হত্যা করা হয়নি, সে আত্মহত্যা করেছিলো।’
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সামিরা বলেন, ‘সত্য কথা একটাই। সত্য কখনও দুইটা হয়না। মিথ্যে কথা বলতে গেলে প্যাচিয়ে বলতে হয়। একেকবার একেকবার জনের নাম বলতে হয়। আমি যা বলেছি সেটাই প্রমাণ হবে। ইন্টারপোল, এফিবিআই আসলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমিও চাই তারা আসুক।’
তিনি বলেন, ‘আমার শাশুরি (সালমান শাহের মা, নীলা চৌধুরী) বারবার বলেন যে- তিনি ইন্টারপোল, এফবিআই এর তদন্ত চান। আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি ওয়েলকাম জানাই। আমার জন্য আরো সুবিধা হবে প্রমাণ করতে যে, এটি আসলেই আত্মহত্যা, কোনোভাবেই হত্যা না। আল্লাহ আছেন উপরে। যত তদন্ত করা হোক না কেন আমার কোনো সমস্যা নেই।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এই মামলার সঠিক তদন্ত আমিও চেয়ে এসেছি। স্বামী খুনের অপবাদ আমি বয়ে বেড়াতে চাই না। এই তো সেই স্বামী যে আমার একটু সুখের জন্য কতো পাগলামি করেছে। আমিও তাকে প্রাণের মতো ভালোবেসেছি। সেইসময় যারা সালমানের কাছের মানুষ ছিলেন তারা সবাই জানেন এসব। আমাকে সালমানের মা ব্যক্তি আক্রোশ থেকে খুনের আসামি বলছেন।’
সালমান শাহের ভক্তদের উদ্দেশ্যে সামিরা বলেন, ‘আমার কথাগুলো সালমান শাহের ভক্তদের মানতে কষ্ট হবে। কিন্তু এটাই সত্যি। আমারও কষ্ট হয়। যার হাত ধরে বাবা, মা পরিবার ছেড়ে চলে এসেছিলাম তাকে হারিয়েছি ভাবতে। আজও ইমনের বিকল্প কেউ নেই আমার মনে। বেঁচে আছি, বেঁচে থাকতে হয়।
ইমনের মায়ের ভুল কথায় বিভ্রান্ত হয়ে, আবেগতাড়িত হয়ে তার ভক্তরা আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেন, বাজে ধারণা করেন। কিন্তু কারো উপর আমার কোনো রাগ নেই, কষ্ট নেই। প্রথম থেকেই তারা সালমান শাহকে ভালোবাসেন।’
কাঁদতে কাঁদতে সামিরা বলেন, ‘সালমান শাহের ভক্তরা এতদিন এক তরফা শুনে এসেছে। তাই ওরা আমাকে দোষ দেয়। এতে ওদের কোনো দোষ নেই। এখন ওদের বোঝা উচিত। এখন অনেক কিছু আছে, সবকিছু মিলিয়ে দেখুক। কাগজপত্র, বিভিন্ন প্রমাণ, ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) রিপোর্ট, সিআইডি, জুডিশিয়াল রিপোর্ট দেখুক। সর্বশেষ পিবিআই দেখছে এখন। রিপোর্ট একই হবে ইনশাল্লাহ।’
Advertisement
যোগ করে সামিরা বলেন, ‘আমি কিছুই করিনি। আমি কিছু করে থাকলে বাসায় বসে এই দোষ আমার কাঁধে নিতাম না। এখন এত বোকা কোনো বাংলাদেশের মেয়ে নেই। আর আমাদের দেশে শাশুরি-বউয়ের মধ্যে টুকটাক ঝামেলা থাকেই। কিন্তু আমার শাশুরি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইমনের মৃত্যুকে ‘ইনক্যাশ’ করতে চাইছেন। বারবার তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইমনের খুনি হিসেবে বলছেন- সামিরা-সামিরা-সামিরা।
কেন? আমার ইমন (সালমান শাহ) যতদিন বেঁচে ছিল আমার শাশুরি কি সে সময় বোবা ছিলেন? কেন ইমন নিজে বলেনি? আমাকে নিয়ে কারো কাছে কোনো অভিযোগ করেনি? কারণ সত্যিটা হলো আমার কোনো দোষ ছিলো না। ইমন ওর মাকে পছন্দ করতো না। এটা ইমনের পরিবার, খালা-মামা ও তাদের বাচ্চারা জানতো। ফিল্মের লোকেরাও জানতো। ওর মাকে নিয়ে সবসময়ই ও মানসিক প্রেসারে ভুগতো। অনেক কষ্ট নিয়ে সে আলাদা হয়েছিলো মায়ের কাছ থেকে।
ওর মা কারাগারে ছিলো কিছুদিন। ইমন দেখতে যেতো না। আমিই জোর করে পাঠিয়েছি। এসব কথা নীলা চৌধুরী কী করে ভুলে যান। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি তার পাশে থাকতে। কিন্তু তিনি দজ্জাল শাশুরিই হতে চেয়েছেন। যার কাছে নিজের ছেলে ভালোবাসা বঞ্চিত, তার কাছে ছেলের বউয়ের ভালোবাসা আশা করা যায় না। এসব কথা বলতে গেলে আমি অনেক আবেগ প্রবণ হয়ে যাই। আমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় যাচ্ছে। আমিও চাই আসল সত্যটা বের হোক। তাহলে আমি শান্তি পাব।’
সবশেষে সামিরা বলেন, ‘যেটা সত্য সেটা প্রমাণ হবে ইনশাল্লাহ। যতদিন বেঁচে থাকব এটাই বলে যাব। ভক্তরা যেন ইমনকে দোয়া করে। ইমনের আসল নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহারিয়ার, সালমান শাহ না। আপনারা পারলে চৌধুরী মোহাম্মদ শাহারিয়ার নাম নিয়ে তার জন্য দোয়া করবেন। আপনারা আমাকে পছন্দ-অপছন্দ করলে কিছুই যায় আসে না। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন।’
এনই/এলএ