দেশজুড়ে

গাইবান্ধার সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার উপরে

গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবণতি হয়েছে। ফলে সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ১০টিরও বেশি ইউনিয়নের ২০ হাজারের বেশি মানুষ।

Advertisement

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। নদ-নদীগুলোতে আরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কোথাও বাঁধ ভেঙে বন্যা দেখা না দিলেও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

সোমবার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপরে, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার উপরে, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপরে ও তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক বাড়িতেই ঘরে পানি ঢুকেছে, টিউবওয়েল ডুবে গেছে, শুকনো জ্বালানি ভিজে গেছে। গবাদিপশুগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। বিভিন্ন স্কুলগুলোতেও পানি প্রবেশ করেছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্য চাষ প্রকল্পের রেনু পোনা ও মাছ।

Advertisement

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া বর্ষণের পর থেকেই নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরাঞ্চলগুলো। সেখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে কষ্টে দিনাতিপাত করছে অসংখ্য মানুষ। কোথাও এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি।

উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের আবু কালাম (৪৫) বলেন, নদীতে পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কোথায় থাকব, কী খাব ভেবে পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত কোনো চেয়ারম্যান ও মেম্বারের দেখা পেলাম না।

একই গ্রামের আবদুল বারেক খান (৪৮) বলেন, জমিতে ধান ও পাট করেছিলাম। গত মাসের বন্যায় সেগুলো পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এবার ৮ বিঘা জমিতে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। সেগুলোও বন্যায় তলিয়ে গেল। কিভাবে ঋণ শোধ করব বুঝতে পারছি না।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনেও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতিরি চরম অবনতি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

Advertisement

রওশন আলম পাপুল/এফএ/জেআইএম