রাজশাহীতে সংসার শুরু হলো ‘পদ্মা-গড়াই’ দম্পতির। রোববার সকালে বৃষ্টিস্নাত শুভদৃষ্টি হয় এ দম্পতির। এই বর-কনের পরিচয় তারা মিঠাপানির বিরল প্রজাতির ঘড়িয়াল। ৪০ বছরের ‘গড়াই’ এসেছে ঢাকার বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে। বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিলিয়ে এর নাম রাখা হয়েছিল ‘গঙ্গা’। শনিবার বরযাত্রীরা রওনা হয় রাজশাহীর উদ্দেশে। রাজশাহী এসে নাম বদলে ‘গঙ্গা’ হয়ে যায় ‘গড়াই’। পরে রোববার সকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) পরিচালিত এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় পদ্মা-গঙ্গার মোলাকাত হয়।
Advertisement
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাসিকের পার্ক ও বিনোদন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, মেয়র পত্নী রেবেকা সুলতানা সিমী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন, আইইউসিএন এর মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম, চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. ফরহাদ উদ্দিন, মনিটরিং কর্মকর্তা শেখ আবু জাফর টুটু প্রমুখ। পদ্মা ও যমুনায় একসময় প্রচুর দেখা মিলত ঘড়িয়াল। কালের আবর্তে এখন বিলুপ্তির পথে। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় থাকা দুটি ঘড়িয়ালই ছিল নারী। অন্যদিকে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। শুক্রবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় পদ্মার ৩২ বছরের সঙ্গীনিকে।
শনিবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় সেখানকার তিন পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে সাক্ষাত হয় তার। সেখানে রাজশাহী থেকে যাওয়া কনের নাম যমুনার সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে ‘যামিনি’।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আর্থিক সংকটে এতদিন তাদের বিনিময় করে প্রজননের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। তবে রাজশাহী-ঢাকা চিড়িয়াখানা ও বন বিভাগের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) আন্তচিড়িয়াখানা ঘড়িয়াল বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়।
Advertisement
এনিয়ে গত বছরের ২৪ এপ্রিল বন বিভাগের সঙ্গে ঢাকায় আইইউসিএনের একটি বৈঠক হয়। সেখানে অংশ নেন সব চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়করা। ওই সভায় ঘড়িয়াল বিনিময়ের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়। কথামতই রাজশাহী থেকে কনে গেলো এবং ঢাকা থেকে বর এলো।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, ঘড়িয়াল নামের এই জলচর সরীসৃপ লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির। ঘড়িয়ালের দেহের দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৭ মিটার। সাধারণ প্রকৃতিতে ৫০-৫৫ বছর বাঁচে। রাজশাহীর ঘড়িয়ালের বয়স ৪০ হয়ে গেছে। গঙ্গা নদী ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও ঘড়িয়াল দেখা যেত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে এবং সেগুলোর শাখা-প্রশাখায় একসময় প্রচুর দেখা যেত ঘড়িয়াল। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রজননসক্ষম ঘড়িয়াল বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে ঘড়িয়াল মহাবিপন্ন বন্য প্রাণী, যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।
ড. ফরহাদ উদ্দিন আরো বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি ঘড়িয়ালের প্রজনন মৌসুম। এরা মার্চ-এপ্রিলে ডিম দেয়। ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। একটি নারী ঘড়িয়াল সাধারণত ৪০-৪৫টি ডিম দেয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আইআই
Advertisement