পঞ্চগড়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
Advertisement
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয়দের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদের মধ্যে ৩০ হাজার দুর্গত মানুষ ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি বেসরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে, শনিবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। রোববার সকালে করতোয়ার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তবে আকস্মিক এ বন্যায় জেলার ৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটের রেললাইন। প্রবল স্রোতের কারণে ঝলই শালশিরি এলাকার নয়নিবুরুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের পাথর সরে গেছে (ওয়াস আউট)। গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
এতে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বালুর বস্তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সংস্কারের চেষ্টা করছে রেল বিভাগ।
সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকার কৃষক মো. বাদল বলেন, ‘আমি খরার কারণে রোপা আমন লাগাতে পারছিলাম না। একটু বৃষ্টি হওয়ার পর তিন বিঘা জমিতে আমন লাগিয়েছি। পাশে একটি পুকুরে কিছুদিন আগেই মাছ ছাড়া হয়েছিল। সব পানিতে ভেসে গেছে।’
Advertisement
বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম জোন) বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি স্লুইস গেট দিয়ে পানি অপসারণ না হওয়ায় পঞ্চগড় এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ ওয়াস আউট (ক্ষতিগ্রস্ত) হয়েছে। এজন্য সাময়িক রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি কমে গেলে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা জরুরিভাবে একটি আলোচনার আয়োজন করি। যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ হাজার দুর্গত মানুষ ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি বেসরকারিভাবে শুকনা খাবার সরবরাহসহ তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সফিকুল আলম/এএম/জেআইএম