কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা ও ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা। জেলার গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া ও বদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা, ডুবে গেছে রোপনকৃত আমনখেতসহ বিভিন্ন ফসল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষজন। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া, আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, লোহানী, গজঘন্টাসহ সদর ইউনিয়নের জয়রাম ওঝা, শংকরদহ, চর ইশোরকুল, গান্নারপাড়, গোল্লারপাড়, চর মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, হাজিপাড়াসহ অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের তিস্তার বাধ ভেঙে যাওয়ায় চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে যেতে বসেছে। স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে বিদ্যালয়টি রক্ষার শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। পানিবন্দি লোকজন তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানির নিচে ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা জমির আমন ধানের খেতসহ সবজি ও মরিচ খেত। লোকজন ও পশু-পাখি নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কটে পড়েছেন।
Advertisement
কাউনিয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার চর চতুরা, চর নাজিরদহ, পল্লীমারী, চর গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, গুপিডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, প্রাননাথচর, চর ঢুসমারা, হয়বত খাঁ, চর গনাই, টাপুর চর, বিশ্বনাথ চর, আজম খাঁ, হরিচরন শর্মা, রাজিব অংশ ৪, নজপাড়া, তালুকশাহবাজ গ্রামে তিস্তা নদীর পানি ঢুকে বন্যাকবলিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট ভেঙে গেছে, তলিয়ে গেছে আমন ধান, বীজতলা, সবজিখেত, নার্সারি বাগান, মাছের খামার ও পুকুর। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব সেইসঙ্গে গোখাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি।
পীরগাছায় ৩টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া, শিবদেবচর, আমিনপাড়া, চরছাওলা কামারের হাট, রামসিং, জুয়ানের চরসহ প্রায় ১০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামগুলোতে অবস্থিত ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চর তাম্বুলপুর, নামাচর, চররহমতসহ ৬টি ও কান্দি ইউনিয়নের সতন্ত্ররা, দোয়ানি মনিরাম, তেয়ানি মনিরাম এবং দীঘটারি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের পীরগাছা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ৩ কিলোমিটার অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণ সামগ্রী না পৌঁছানোয় পানিবন্দি লোকজন চরম বিপাকে পড়েছেন। বর্তমানে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
Advertisement
এছাড়া বদরগঞ্জে শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লোকজন। স্থানীয়রা কালাগাছ ও বালুর বস্তা দিয়ে ফাটল ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, গত ৩ দিনে ৩৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম