মানুষের মনের ভেতর দুই ধরনের সৌভাগ্য চিন্তা কাজ করে- এক হচ্ছে ঈশ্বর প্রদত্ত আর দুই হচ্ছে মানুষ প্রদত্ত। যারা মনে করেন ঈশ্বর আছেন তার ভাগ্য তার হাতে গচ্ছিত রয়েছে। ঈশ্বরই কোনো এক শুভ দিনক্ষণ ঠিক করে তার ভাগ্য বদলে দেবেন।
Advertisement
এমন ভাবনার ব্যক্তিটি ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঈশ্বরের শোকর-গোজার করতে করতে যখন কোনো উপায়ান্তর পায় না তখন শুরু হয় তার হতাশার পাঠ। চারদিকে তারই কিছু বন্ধু-বান্ধব যখন রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় তখন তার মনের ভেতর ভাগ্য ভাবনার জুয়া খেলার আসর বসে। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে কোনটা করবে আর কোনটা করবে না- তা আর ভেবে উঠতে পারে না। তখন চেষ্টা করে নগদ বিনোদন নিয়ে সেই হতাশা থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যায়।
হতাশা থেকে বিকৃতির পাঠ শুরু হয়- সে মনে মনে ভাবতে থাকে ঈশ্বর আমার জন্য কিছুই তো করলেন না আর এই ভাবনা থেকে শুরু হয় ধর্ম, সমাজ, নৈতিকতার বিরুদ্ধে বিতৃষ্ণা। ধর্মীয় মূলবোধতো আগে থেকেই থাকে দুর্বল, তারপরে যোগ হয় আশেপাশে থেকে শোনা ধর্মের অপব্যাখ্যা। চূড়ান্তভাবে মানবিক বৈকল্যসাধন করে চলতে থাকে ২২ মাসের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের শিশু ধর্ষণ-পর্ব। আমাদের দেশে একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে যে কোনো একটা অন্যায় কেউ করে ফেলার পর তাকে বাঁচানোর জন্য প্রভাবশালী মহলের তদবির ও ফোন-বাণিজ্য। ও আমার লোক ওকে ছেড়ে দাও, ও তমুকের লোক আমার শত্রু ওকে ছেড় না ইত্যাদি ইত্যাদি। ক্ষমতার অপব্যবহার ও ক্ষমতার গরম দেখানোয় সিদ্ধহস্ত আমাদের দেশের লোকজন। গ্রাম, গঞ্জ, মফস্বল এ সালিশ ও তদবির বাণিজ্য এখন একটা প্রফেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু না করেও ঘরে বসে ফোন ও তদবির বাণিজ্য করে টাকা কামানো যায়।
দেশের প্রতিটি কোনায় নারী ও শিশু কিশোর কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। কাউকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেললেও যেহেতু এ দেশে বিচার পাওয়া যায় না সেহেতু এখানে জোর যার মুল্লুক তার নীতি দাঁড়িয়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে তৈরি হয় আতঙ্ক, আতঙ্ক থেকে মানসিক চাপ, মানসিক চাপ থেকে হতাশা, পরিশেষে মানসিক বিকৃতি। যার ফলাফল আমরা বিগত কয়েক মাস ধরে দেখে আসছি।
Advertisement
বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার অপব্যবহার- এই বিষয়গুলো একজন সুস্থ মানুষের মনকে কয়েক মূহূর্তের মধ্যে হতাশাপ্রবণ করে দেবে।
উন্নতির কথা যদি বলি তাহলেতো বলতে হয় উপরে উল্লিখিত এই তিনটি বিষয়ে আমাদের উন্নতি কতটুকু অর্জিত হয়েছে? সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি বিষয়কে উপেক্ষিত রেখে শুধুমাত্র ব্রিজ-কালভার্ট-ফ্লাইওভার নির্মাণ করে উন্নতির ফিরিস্তি দিলে কিন্তু ধর্ষণ ও ধর্ষক তৈরির রাস্তা বন্ধ হবে না।
প্রভাবশালী মহল-বিশেষের লুটপাট, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো কিন্তু আমাদের কাছে একটি হতাশাপ্রবণ বিকৃত চিন্তার প্রজন্ম তৈরি করে দিচ্ছে। মানুষ যেমন পড়ে শেখে, পরিবার থেকে শেখে, ঠকে শেখে আর সবচেয়ে বেশি শেখে চোখের সামনে দেখা ঘটনা থেকে। আমাদের সামনে যে উদাহরণ প্রভাবশালী ক্ষমতাবান মহল তৈরি করছে তা দেখে দেখে হতাশ হয়ে মানুষ বিকৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর দায় কি কোনো উন্নয়নশীল সরকার নেবে?
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
Advertisement
এইচআর/এমএস