ধর্ম

এক বুজুর্গের স্বপ্ন এবং হাজিদের হজ কবুল

আল্লাহ তাআলার জন্য বান্দার আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক কুরবানির ও প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হলো হজ। পবিত্র নগরী মক্কার বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত ইবাদত হলো হজ।

Advertisement

লাখ লাখ হাজির পদচারনায় হজের রোকনগুলো যথাযথ আদায় করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহ তাআলার একান্ত মেহেরবানী এবং রহমত না হলে হজে মাবরুর বা কবুল হজের আশা নিরাশারই নামান্তর।

হজ সম্পর্কে এক বুজুর্গের স্বপ্ন এবং হজ কবুলের ব্যাপারে একটি সুন্দর ঘটনা রয়েছে। যা ‘বাইতুল্লাহর মুসাফির’ গ্রন্থে যুগশ্রেষ্ঠ আরবি সাহিত্যিক ও আলেমে দ্বীন মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ (হাফেজাহুল্লাহ) তুলে ধরেছেন-

‘ এক বুজুর্গ ৯ তারিখ রাতে মিনায় (একটি) স্বপ্ন দেখেন; দু’জন ফেরেশতা, এক অন্যকে জিজ্ঞাসা করছেন, এবার কত মানুষ হজ্ব করতে এসেছে?

Advertisement

অপরজনের উত্তর, ছয় লাখ। প্রথমজন জিজ্ঞাসা করলেন, এদের মধ্যে কত জনের হজ্ব মকবুল (কবুল) হয়েছে? অপরজনের উত্তর, মাত্র ছয়জনের।

বুজুর্গের চোখ খুলে গেল। ভয়-সন্ত্রস্ততায় তিনি ঘেমে গেলেন আর ভাবলেন, ছয়জন ভাগ্যবানের তালিকায় আমার নাম আর কিভাবে আসবে! সব কষ্ট-সাধনা তাহলে বেকার হয়ে গেল! হায়, আমার তাহলে কী উপায় হবে!

১০ তারিখের রাতে মুজদালিফায় বুজুর্গ আবার স্বপ্ন দেখেন, ঐ দু’জন ফেরেশতা; একজন জিজ্ঞাসা করছেন, শুধু ৬ জনের হজ কবুল হলো, আর সবার হজ্ব বেকার গেল!

দ্বিতীয়জন বললেন- না, বরং ওই ৬ জনের ওসিলায় পুরো ৬ লাখ লোকের হজই আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিয়েছেন।

Advertisement

সুবহানাল্লাহ! রাব্বুল আলামিনের রহমতের দরিয়ায় যখন জোশ আসে তখন এমনই হয়! রহমতের একেকটি ঢেউ বান্দার সব গোনাহ ও নাপাকি ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

আর তখননি ৬ জনের ওসিলায় পুরো ৬ লাখ হাজির হজ আল্লাহ কবুল করে নেন।

সুতরাং সব সময়তো বটেই, হজের সফরেও মহান আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা থেকে গাফেল না থেকে রহমতের দরিয়ায় ডুবে যাওয়ার আবেগ ও আশা থাকা চাই।

সাবধান থাকা জরুরিহজের সফরে অংশগ্রহণকারী সব হাজিদের সাবধান থাকা জরুরি যে, বাইতুল্লাহ হজের সফরের শুরু থেকে ইহরাম, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, মাকামে ইবরাহিমে নামাজ, সাফা-মারওয়া সাঈ, আরাফার ময়দানে অবস্থান, মজদালিফায় রাতযাপন, মিনায় অবস্থান ও কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথামুণ্ডণসহ সব জায়গায় কোনো হাজির সঙ্গে মনের অজান্তেও খারাপ আচরণ না করি, বেয়াদবি না করি, কাউকে কষ্ট না দিই।

তাহলে যাদের হজ কবুল হয়ে যাবে, অন্তত্ব তাদের ওসিলায় আল্লাহ তাআলা আপনার হজও কবুল করে নেবেন।

পরিশেষে…আল্লাহ তাআলা সারা বিশ্ব থেকে যত হাজিকে বাইতুল্লাহ যাওয়ার তাওফিক দিয়েছেন; তাদের প্রতি দয়া করে কিছু না কিছু দিয়েই বিদায় করবেন। এ আশাই সব হাজিদের করা উচিত।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সবচেয়ে গোনাহগার ওই ব্যক্তি, যে আরাফার ময়দানে হাজির হলো এবং অকুফ (অবস্থান) করল, তারপরও ধারণা করল যে, আল্লাহ হয়ত তাকে মাফ করেনি।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহ সম্পর্কে যে ধারণা করে, আল্লাহ বান্দার সঙ্গে সে আচরণই করেন।

হাদিসে কুদসিতে স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তো বান্দার ধারণার কাছে থাকি।’

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা করার তাওফিক দান করুন। হজে অংশগ্রহণকারী সব মানুষের হজ কবুল করে তাদের নিষ্পাপ করে ঘরে ফেরার তাওফিক দান করুন। তাদের কবুল হজের ছিটেফোট প্রতিদান আমাদেরকেও দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস