দেশজুড়ে

প্রবল বর্ষণে লালমনিরহাটে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও সিংঙ্গীমারী নদীর পানিও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Advertisement

এতে লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভাসহ জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশাপাশি দহগ্রাম সড়কের কয়েক ফুট উপর দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে লালমরিহাটের তিস্তা ব্যারাজের পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

পানিবন্দি এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু-পাখি নিরাপদে রাখার জায়গা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন সাধারণ লোকজন।

Advertisement

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীর পাশাপাশি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

এরই মধ্যে পাটগ্রামের পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী দহগ্রাম, বাউড়া, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, ফকিরপাড়া গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী বিধৌত এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এতে করে গোটা জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজন তাদের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানির নিচে ডুবে গেছে সদ্য রোপণ করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধানে খেত, নষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ খেত। জেলার বন্যার পানিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, প্রবল বর্ষণে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। চারদিকে পানি আর পানি। লোকজন ও পশু-পাখি অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

Advertisement

হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, ক্রমেই তিস্তার পানি বেড়ে চলছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বসবাসরত লোকজনকে সতর্ক থাকতে সংশিষ্ট ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে খবর পাঠানো হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের মাঝে তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পাটগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-কুতুবুল আলম বলেন, প্রায় ৩০-৪০ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের পাশাপাশি পাকা সড়কেরও কয়েকটি জায়গার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার বিকেল থেকে পানিবন্দি লোকজনের মাঝে ত্রাণের চালসহ শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজা-উদ দৌলা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যার্তদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। ত্রাণ হিসেবে জেলায় ২০২ মেট্রিক টন জিআর চাল ও সাড়ে ৪ লাখ টাকা মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক সফিউল আরিফ বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।

রবিউল হাসান/আরএআর/জেআইএম