বিশেষ প্রতিবেদন

তুলে না থাকলে যেভাবে পাবেন স্মার্ট কার্ড

রাজধানী ঢাকাসহ অনেক বিভাগীয় শহরে উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও শেষও হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এ কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে স্মার্ট কার্ড তুলতে পারেননি যারা, তাদের এখন বিশেষ ব্যবস্থায় এটি নিতে হবে।

Advertisement

ইসির (নির্বাচন কমিশন) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটারদের একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী থানা রয়েছে। বিতরণের সময় শেষ হলেও যারা স্মার্ট কার্ড তুলতে পারেননি তারা মূল আইডি কার্ডের একটি ফটোকপি নিয়ে ওই নির্বাচনী থানার কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে। ওই কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে যেতে হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনে। সেখানে দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি দেয়ার পর দায়িত্বরতরা ফটোকপি করা আইডিতে লিখে দেবেন, দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেয়া হয়েছে। এরপর ওই কাগজ নিয়ে আবার যেতে হবে নিজ নিজ নির্বাচনী থানা অফিসে। সেখানে ফটোকপি ও আগের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্মার্ট কার্ড তুলতে হবে।

আর ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে অন্য সিটির ভোটাররা থানা নির্বাচনী অফিসে গেলেই জানতে পারবেন কোথায় আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে।

এ বিষয়ে এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় ঘোষণা দেয়া হয়। কেউ সেই সময় তুলতে না পারলে বিশেষ এ ব্যবস্থায় তুলে নিতে পারবেন। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে এভাবে সারা বছরই স্মার্ট কার্ড তোলা যাবে। তবে দ্রুত তুলে নিলেই ভালো হয়।

Advertisement

সবাইকে স্মার্ট কার্ড দিতে আরও দুই বছর

জানা যায়, নয় কোটি ভোটারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র এক কোটির বেশি নাগরিক স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেককে স্মার্টকার্ড দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি এটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে আরও দুই বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দরকারি সরঞ্জামের অভাবে থমকে আছে এ প্রকল্প। বিদেশি ঠিকাদারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এখন নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের উদ্যোগ নেয় ইসির এনআইডি উইং। এজন্য ইসিকে কারিগরি সহযোগিতা দিতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, সবাইকে কার্ড দিতে আরও অন্তত দুই বছর লাগতে পারে। আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেয়ার জন্য যে ১০০ জোড়া যন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, এর ৩৭ জোড়াই এখন অচল।

Advertisement

দেশেই স্মার্ট কার্ড তৈরির উদ্যোগ

চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় স্মার্ট কার্ড সরবরাহকারী ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবের্থার টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ইসি।

ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি। আগামীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্মার্ট কার্ড তৈরি করবে কমিশন। এজন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে ইসি। ফলে স্মার্ট কার্ড বিতরণে দেরি হলেও টাকা সাশ্রয় হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ফান্সের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নয় কোটি স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে মাত্র এক কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এখনও দুই কোটি ৩৬ লাখ চার হাজার পিস ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) কার্ড আসেনি। ইতোমধ্যে ৫১ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কমবেশি আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার তাদের পাওনা রয়েছে। এজন্য ইসি চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।

এখন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপানো হবে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একাধিক নমুনা কার্ডও ইসিকে সরবরাহ করেছে।

এইচএস/এমএআর/আরআইপি