আমাদের শহুরে জীবনে বৃষ্টি কখন আসে, কখন যায় ঠিক বোঝা যায় না। শহরের বৃষ্টি কেমন প্রাণহীন লাগে । যেন একটানা মনখারাপের কোনো সুর। ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের বৃষ্টিতে ভেজার উন্মাদনা এখানে ঠিক মেলে না। নাগরিক ব্যস্ততায় পানসে হয়ে যায় আমাদের সমস্ত চাওয়া। তবু বৃষ্টি আসে। আর আমরা তাতে যতটা না রোমান্টিক হই তারচেয়ে বেশি রোমান্টিক হওয়ার ভান করি। আমাদের কথাগুলো শোনার হয়তো কারো সময় নেই। তাই আমরা বেছে নেই ফেসবুক। হুট করে এক পশলা বৃষ্টি ঝরে গেল কিংবা সারাদিন ঝুম বৃষ্টি- গান আর কবিতায় ছেঁয়ে আমাদের ফেসবুকের ওয়াল।
Advertisement
জলাবদ্ধতার কারণে নৌকা আর রিকশা পাশাপাশি চললে আমরা তাই নিয়ে মজা করি- এ যেন এশিয়ার ভেনিস নগরী! কিন্তু বাস্তবতা আমাদের জন্য কতটা সহায়ক? বৃষ্টি নিয়ে বিলাসিতা করার সুযোগ আমাদের কতটুকু? এ শহরে জমজ ভাইবোনের মতো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অসংখ্য আকাশছোঁয়া বিল্ডিং। কিন্তু নির্মম সত্যিটা হচ্ছে এই শহরেই রাতের বেলা ঘর তো দূরে থাক, বিছানা বালিশ ছাড়াই ঘুমাতে যায় কয়েক লক্ষ মানুষ! ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা না পেয়েও এই মানুষগুলো দিনের পর দিন একটু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। আমরা যখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে খিচুড়ি আর ইলিশভাজা খেয়ে নিজের ঘরে, নিজের বিছানায় উষ্ণ কাঁথা গায়ে জড়িয়ে সুখনিদ্রায় যাই; ঠিক একই সময়ে আমাদেরই মতো অসংখ্য মানুষ নিজের শরীরটাকে বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে একটু আশ্রয়ের আশায় ছুটে বেড়ান!
বিপুল জনসংখ্যা, তীব্র যানজট, জলাবদ্ধতা আর ইট-কাঠ-পাথরের এই কৃত্রিমতায় ভরা শহরে থেকে আমরা মানুষগুলোও কি যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছি? নইলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমাদের স্পর্শ করে না কেন! শুধু নিজেরটুকু নিয়ে ভালো থাকার দীক্ষা আমরা কোথা থেকে নিচ্ছি! ভালোবাসা আর মমতার বদলে ঘৃণা আর স্বার্থপরতার বীজ আমাদের জিনে কে মিশিয়ে দিচ্ছে! একজন মানুষ সবাইকে জাগাতে পারে না। একটি কণ্ঠস্বর কতদূর আর পৌঁছায়? কিন্তু অর্ধেক মানুষ আওয়াজ তুললে বাকি অর্ধেক জেগে উঠতে বাধ্য।
আমরা যদি ফেসবুককেই বেছে নেই এই মানুষগুলোকে সহায়তা করার জন্য, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে দেয়ার জন্য তবে ক্ষতি কী! আমাদের বিলাসিতা ভরা বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে যে মানবতা তাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও আমাদেরই। প্রেম-ভালোবাসা-রোমান্টিকতায় ভরা স্ট্যাটাসের পাশাপাশি আমরা ওদের কথা ভেবেও কিছু লিখি, কিছু করি। সবাই মিলে ভালো থাকার নামই যে ভালো থাকা!
Advertisement
এইচএন/এমএস